পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ বিভূতি-রচনাবলী বললুম—স্বানাহার করবার কোনো দরকার নেই এখন। আমার আসল দরকার শেষ হলে আমি এখান থেকে চলে যাবো । —লা, তা হবে না বাবু, আপনাকে খাওয়া দাওরা করতে হবে, মা বলে দিলেন। বাড়ির কত্রীর আদেশ অমান্ত করতে মন উঠলো না। স্নানাহার সেখানেই করলুম এবং কর্তা কাছারি করে বাড়ি ফিরে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করবার পরে বললেন—যদি কিছু মনে না করেন, এখানেই থাকুন না কেন ? আমি আপত্তি করলুম—ডাকবাংলোয় যাবো ভেবেচি, কেন মিছে আপনাদের কষ্ট দেওয়া ? আমার আপত্তি গ্রাহ হল না। বৈঠকখানার পাশের ঘরটায় আমার থাকবার জায়গা হল এবং এর পরে দিন দশেক কাজের খাতিরে চাটগাঁয়ে ছিলুম—অন্ত কোথাও আমার ওঁর যেতে দিলেন না। বড় উদার পরিবার, দু পাচ দিনের মধ্যে আমি যেন তাদের বাড়ির ছেলের মতো হয়ে গেলুম। বাড়ির মধ্যে গিয়ে রান্না-ঘরের মধ্যে খেতে বসি, মেয়ের পরিবেষণ করে, কাউকে দিদি কাউকে মাসিম বলে ডাকি। র্তারাও আমায় স্নেহের চোখে দেখেন । বারে দিন পরে যখন আমি চাটগা ছেড়ে কক্সবাজার গেলুম, তখন সত্যিই তারা অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে পড়লেন, বার বার বলে দিলেন, আমি যেন ফিরবার সময় আবার এখানে আসি । কক্সবাজারে যাবার পথে মহেশখালি চ্যানেল নামে ক্ষুদ্র সমুদ্রের খাড়ি পড়ে। দূরে চর কুতুবদিয়াতে লাইট হাউস ও আদিনাথ পাহাড়ের দিকে চোখ রেখে আমি এদের কথা কতবার ভেবেচি। এতদূর বিদেশে যে আত্মীয়-বন্ধু লাভ করবো, তাদের ছেড়ে আসতে যে কষ্ট হবে, তারাও চোখের জল ফেলবে আমার আসবার সময়ে-এ অভিজ্ঞতা আমার জীবনে তখন নতুন, তাই বড় আশ্চর্য মনে হচ্ছিল ব্যাপারটা। কিন্তু পরবর্তী জীবনে কতবার এ অভিজ্ঞতা আমার যে হয়েচে । পর কতবার আপন হয়েচে, এমন কি আমার বিশ্বাস পর যত সহজে আপন হয়, আপনার লোকে তত সহজেও হয় না এবং তত আপনও হয় না । কক্সবাজারে একদিন একটি ঘটনা ঘটেছিল। জীবনের সে এক বিপদজনক অভিজ্ঞতা—প্রাণসংশয়ও ঘটতে পারতো সেদিন। কক্সবাজারে সমুদ্রের ধারে, সাগরবেলায় জোয়ার নেমে গেলে কড়ি, শঙ্খ, ঝিকুক ইত্যাদি কত পড়ে থাকে ; বড় বড় সমূদ্রের ঢেউ এসে কুলে তাল দেয়। জ্যোৎস্না-পক্ষের রাত্রি, কত রাত পর্যন্ত সেখানে এক চুপ করে বসে থাকি, যশোর জেলার একটি ক্ষুদ্র পল্লীগ্রাম থেকে কতদূর যেন চলে এসেছি, সেখানকার ক্ষুদ্র নদী ইছামতীর কথা মনে পড়ে, ইছামতীর দ্বপাড়ের বাশবনের কথা ভুলতে পারিনে, এত দূরে বসে দেশের স্বপ্ন দেখতে কি ভালোই ধে লাগে। কাউখালি বলে ছোট একটি নদী বা খাল কক্সবাজারের পাশ দিয়ে এসে সমূত্রে পড়েচে। একদিন একখানা সাম্পান ভাড়া করে কাউখালি থেকে বার হয়ে সমূত্রে বেড়াতে গেলুম।