পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՓԳe বিভূতি-রচনাবলী বেড়াতে গিয়ে শিলং থেকে সিলেট যাওয়ার মোটর রোডের দুধারে বিশেষ করে ডাউকি প্রভৃতি নিম্ন অঞ্চলে, অবিকল অরণ্যের এই প্রকৃতি আমার চোখে পড়েচে । বাংলাদেশের পরিচিত কোনো আগাছা, যেমন শেওড়া, ভাট, কাল-কামুন্দে প্রভৃতি এদিকে একেবায়েই নেই। এদিকে উদ্ভিজ্জসংস্থান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, তাতেই বোধ হয় যা দেখি তাই যেন ছবির মতো মনে জাগায় অপূর্ব সৌন্দর্যের অনুভূতি। সর্বত্র অসংখ্য সবুজ বনটিয়ার বাক । বড় বড় বেত-ঝোপ । কঁটিাবনের নিবিড় জঙ্গল মাঝে মাঝে । - এই পথে প্রথম রবারের বাগান দেখি । আগে রবারের বাগান বলে বুঝতে পারিনি, বড় বড় গাছ, অনেকট কাটাল পাতার মতো পাতা । গাছের গায়ে নম্বর মারা—কোনো কোনো বাগান কাটাতার দিয়ে ঘেরা, কোনো কোনো বাগান বেষ্টনীশূন্ত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে—শুনেছিলাম অনেক বাগান পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে । এক জায়গায় ডাকপিয়াদার থাকবার জন্তে বনের মধ্যে ছোট খড়ের ঘর। আমার সঙ্গে যে পিয়াদা এসেছিল, সে এর বেশি আর যাবে না। রাত্রে আমরা সেই খড়ের ঘরেই রইলুম, সকালে অন্যদিকের পিওন এসে এর কাছে থেকে ডাকব্যাগ নিয়ে যাবে, এ পিয়াদ ওর ব্যাগ নিয়ে চলে আসবে সিংজুতে। আমরা যখন সে ঘরে পৌছলাম, তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেচে। ডাকপিয়াদার ঘরে যাপিত সেই রাত্রিটি আমার জীবনে মনে করে রাখবার মতো। দুধারে আরাকান ইয়োমার উন্নভকায় শাখা-প্রশাখা, সারা পর্বত-সামু নিবিড় অরণ্যময়। অরণ্যের সান্ধ্য স্তব্ধতা ভঙ্গ করেচে পার্বত্য ঝরনার কুলকুল শব্দ, অন্ধকার বনের দিক থেকে কত কি পাখীর ডাক আসচে; যদিও স্থানটির মাইলথানেকের মধ্যে খুব বড় একটা রবারের বাগান, তবুও সন্ধ্যায় যেন মনে হচ্ছিল পৃথিবীর প্রাস্তসীমায় এসে পড়েচি দুজনে, জনমাম্য নেই বুঝি এর কোনোদিকে। বেশি রাত্রে ডাকপিয়াদা এসে পৌছুলো । নবাগত ডাকপিয়াদার নাম কাচিন, একটু একটু ইংরেজি জানে ; লোকটির চেহার এমন কর্কশ ও রুক্ষ যে পথে-ঘাটে দেখলে ডাকাত বলে ভুল হবার কথা। তার সঙ্গে সারাদিন কাটাতে হবে বলে প্রথমটা ইতস্তত করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত সকালবেলা তার সঙ্গেই নতুন পথে পা দিলাম । এবার পথ নিবিড় অরণ্যময় । আমরা ক্রমশ এক মহারণ্যে প্রবেশ করলুম। দুধার বড় বড় বনস্পতিতে সমাচ্ছন্ন। মানুষ নেই, জন নেই, গৃহ নেই, পল্লী, মাঠ নেই, এতটুকু ফাকা স্থান নেই। কেবল নিবিড় জঙ্গল, মাঝখান দিয়ে আকিয়াব থেকে প্রোমে যাবার রাস্তা একে বেঁকে চলেচে । ছোটবড় নানা রকমের গাছ, শাখায় শাখায় জড়াজড়ি করে যেন এ ওর গায়ে এলোমেলো ভাবে পড়ে। বড় গাছগুলির মাথা যেন আকাশ ছুয়ে আছে—এক একটা গাছ প্রায় দেড়