পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ஆசல বিভূতি-রচনাবলী দিয়েচেন সেজন্তে খুব লজ্জিত হলেন –সংযম করবেন আপনি সে কথা ভেবেই আমার স্ত্রী দ্বধ আর মুগের ডাল ভিজে খেতে দিয়েছিলেন সন্ধ্যাবেলা । আমার সার্থী আমাকে বললেন—আপনিই বা বললেন না কেন, যে আপনি শ্রাদ্ধ করবেন না? আপনি তো দিব্যি শুধু দুধ খেয়েই বসে রইলেন— আমি বললুম—ত কি করে জানবো ? আমি কি ছাই মায়ের কথা কিছু বুঝলুম ? —বেশ, বেশ ! কথা না বোঝার দরুন আপনাকে উপোল করতে হল সারারাতপাওঠাকুর বাঙালী ব্রাহ্মণ, বড় ভালো লোক স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ; আর বড় নিরীহ। এই ব্যাপারে দুজনে এত লজ্জিত ও অপ্রতিভ হয়ে গেলেন যে তারপরে যে দুদিন ওখানে ছিলাম, ওঁরা যেন নিতান্ত অপরাধীর মতো সঙ্কুচিত হয়ে রইলেন আমার কাছে। , একটু বেলা হলে আমি বললুম—আজ আমি একা বাড়বকুণ্ড আর সহস্রমায়া যাবো— পাণ্ডাঠাকুর বললেন—দুটো দুদিকে—আজ একদিকে যান ; সহস্রমায়া কিন্তু একা যেতে পারবেন না—বাড়বাকুণ্ড যাওয়া সহজ। রাস্তা বলে দেবো, চলে যাবেন। আবার বনের মধ্যে দিয়ে পথ। এবার সম্পূর্ণ এক চলেচি। লোক সঙ্গে থাকলে প্রকৃতিকে ঠিক চেনা যায় না, বোঝা যায় না আরাকান ইয়োমার পথে দেখেচি, সঙ্গে লোক থাকলে এত বক্‌ বক্‌ করে যে মন কিছুতেই আত্মস্থ হতে পারে না। বাড়বকুণ্ডের পথের দুধারে ঘন জঙ্গল, সমস্ত পথের পাশে কোথাও একটি লোকালয় নেই। মাঝে মাঝে বন্ত পেয়ারা ও বন্ত-কদলীর বন, করবীফুলের সমারোহে শৈল সজ্জিত। কোথাও বা একটি পাহাড়ী ঝরনা সংকীর্ণ পথের ওপর দিয়ে বয়ে চলেচে ; আশেপাশে বনঝোপের শাস্ত, শু্যামল সৌন্দর্য। পথের ধারে দু-জায়গায় পাহাড়ের ফাটল দিয়ে নীলবর্ণ অগ্নিশিখাবার হয়ে সমস্ত শৈলশ্রেণীর আগ্নেয় প্রকৃতি প্রমাণ করে দিচ্চে । বাড়বকুণ্ড পৌঁছতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে গেল। এর প্রধান কারণ আমি একটানা পথ ইটিনি, মাঝে মাঝে বনগাছের ছায়ার শৈলাসনে বসে বিশ্রামের ছলে চারিপাশের অনুপম গিরিবনরাজির শোভা উপভোগ করছিলুম। এক এক জায়গায় শৈলসাচুতে এত বন্ত-কদলীর বন, প্রথমটা মনে হয় সেখানে কেউ কলার বাগান করে রেখেচে । কিন্তু জিজ্ঞাসা করে জানা গেল মানুষের বসতি নিকটে কোথাও নেই, ওগুলি পাহাড়ী বনকলার গাছ। পরে এই পাহাড়ী কলা খেরে দেখেচি, অনেকট বাংলাদেশের দয়া কলার মতো বীচিসৰ্বৰ। তেমন সুমিষ্টও নয়। বাড়বকুণ্ড স্থানটি একটি উষ্ণ প্রস্রবণ, গরম জলের সঙ্গে গধূম অগ্নিশিখা বার হচ্চে, জলে ও আগুনে ভীষণ গন্ধকের গন্ধ। পাণ্ডাঠাকুরের নিজেদের সুবিধের জন্তে জায়গাটা বাধিয়ে রেখেচে—যাত্রীরা গিয়ে দাঁড়ালেই তারা নানারকমে পয়সা আদায় করবার চেষ্টা করে, আমাকেও তারা ঘিরে দাড়ালো। আমি বললুম—আমি যাত্রী নই, পথিক, পুণ্য করতে আসিনি, দেখতে এসেচি। ভারা ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে গেল, এমন অদ্ভুত কথা যেন জীবনে কোনোদিন শোনেনি।