পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত Σ & —পালালো কি এমন তেমন পালালো মা ? সেই সঙ্গে আমাদের এক প্রস্ত বাসন। কিছুই জানি নে মা, সব নিজের ঘর থেকে বলি আহা বামুন এসেচে-সঙ্গক, আছে বাড়তি। ভা সেই বাসন সবশুদ্ধ নিয়ে দু’জনে নিউদিশ । যাক্ সে সব কথা মা, উঠি তাহলে আজ ! রায়ার কি আছে না-আছে বলে মা, সব দিই বন্ধোবস্ত করে। আট দশ দিন কাটিয়া গেল ; সর্বজয়া ঘরবাড়ি মনের মত করিয়া সাজাইয়াছে। দেওয়াল উঠান নিকাইয়া পুছিয়া লইয়াছে। নিজস্ব ঘরদের অনেকদিন ছিল না, নিশ্চিন্দিপুর ছাড়িয়া অবধিই নাই—এতদিন পরে একটা সংসারের সমস্ত ভার হাতে পাইয়া সে গত চার বৎসরের সঞ্চিত সাধ মিটাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়িল । জ্যাঠামশায় লোক মন নহেন বটে, কিন্তু শীঘ্রই সর্বজয়া দেখিল তিনি একটু বেশী কৃপণ। ক্রমে ইহাও বোঝা গেল—তিনি যে নিছক পরার্থপরতার ঝোকেই ইহাদের এখানে আনিয়াছেন তাহা নহে, অনেকটা আনিয়াছেন নিজের গরজে। তেলিদের প্রতিষ্ঠিত ঠাকুরটি পূজা না করিলে সংসার ভাল রূপ চলে না, তাহদের বার্ষিক বৃত্তিও বন্ধ হইয়া যায়। এই বার্ষিক বৃত্তি সম্বল করিয়াই তিনি কাশী থাকেন। পাকা লোক, অনেক ভাবিয়াচিন্তিয়। তবে তিনি ইহাদের আনিয়া তুলিয়াছেন। সর্বজয়াকে প্রায়ই বলেন–জয়া, তোর ছেলেকে বল কাজকর্ম সব দেখে নিতে। আমার মেয়াদ আর কত দিন ? ওদের বাড়ির কাজটা দিক না আরম্ভ ক’রে—সিধের চালেই তো মাস চলে যাবে। সর্বজয়া তাহাতে খুব খুশী । সকলের তাগিদে শীঘ্রই অপু পূজার কাজ আরম্ভ করিল—দুটি একটি করিয়া কাজকর্ম আরম্ভ হইতে হইতে ক্রমে এপাড়ায় ওপাড়ায় অনেক বাড়ি হইতেই লক্ষ্মীপূজায় মাকাল পূজায় তাহার ডাক আসে। অপু মহা উৎসাহে প্রাতঃস্নান করিয়া উপনয়নের চেলীর কাপড় পরিয়া নিজের টিনের বাক্সের বাংলা নিত্যকর্মপদ্ধতিখান হাতে লইয়া পূজা করিতে যায়। পূজা করিতে বসিয়া আনাড়ীর মত কোন অনুষ্ঠান করিতে কোন অনুষ্ঠান করে। পূজার কোন পদ্ধতি জানে না—বার বার বইয়ের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া দেখে কি লেখা আছে—বজায় ছং বলিবার পর শিবের মাথায় বজের কি গতি করিতে হইবে—ওঁ ব্ৰহ্মপৃষ্ঠ ঋষি স্বতলছন কূর্মে দেবতা বলিয়া কোন মুদ্রায় আসনের কোণ কি ভাবে ধরিতে হইবে—কোন রকমে গোজমিল দিয়া কাজ সারিবার মত পটুত্বও তাহার আয়ত্ত হয় নাই, মুতরাং পদে পদে আনাড়ীপনাটুকু ধরা পড়ে। একদিন সেটুকু বেশী করিয়া ধরা পড়িল-ওপাড়ার সরকারদের বাড়ি। যে ব্রাহ্মণ তাহীদের বাড়িতে পূজা করিত, সে কি জন্ত রাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে, গৃহদেবতা নারায়ণের পূজার জন্ত তাহদের লোক অপুকে ডাকিয়া লইয়া গেল। বাড়ির বড় মেয়ে নিরুপমা পূজার যোগাড় করিয়া দিতেছিল, চোঁদ বছরের ছেলেকে চেলী পরিয়া পুথি বগলে গভীর মুখে আসিতে দেখিয়া লে একটু অবাক হইল। জিজ্ঞাসা করিল, তুমি পুজো করতে পারবে ? কি নাম