পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లినశి বিভূতি-রচনাবলী করা চিঠি ভিন্ন রাজার কf থশালায় থাকতে পারা যায় না। আমি রাজদপ্তরের কাউকে চিনতুম না, তৰুণ সাহস করে গেলাম এবং কেশোরাম পোদারের প্রদত্ত পরিচয়-পত্ৰ দেখিয়ে সেখান থেকে একখানা টিকিট যোগাড় করে রাজার অতিথিশালায় এসে উঠলুম। অতিথিশালায় অনেকগুলো ঘর, মূলী বাশে ছাওয়া বেশ বড় বাংলো, দুদিকে বড় বারানা, পেছনদিকে রান্নাঘর ও বাবুচিখানা । দুরকম থাকার কারণ অতিথির ইচ্ছামত ভারতীয় খাদ্য ও সাহেবী-খানা দুরকমই খেতে পারেন। প্রত্যেক ঘরে কলকাতার মেসের মতো তিন চারটি খাট পাতা, তাতে শুধু গদি পাতা আছে, অতিথিরা নিজেদের বিছানা পেতে নেবেন। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা চমৎকার। সকালে চা, বিস্কুট, টেস্ট দেয়, দুপুরে ভাত, তিন-চারটি ব্যঞ্জন, মাছ, মাংস ও পোয়াটাক দুধ, রাত্রে অতিথির ইচ্ছামত ভাত বা রুটি । শীতকালে ব্যবহারের জন্তে গরম জল দেওয়ার বন্দোবস্ত আছে । যে ক-জন চাকরবাক্ষর আছে, তারা সর্বদা তটস্থ, মুখের কথা বার করতে দেরি সয় না, তখুনি সে কাজ করবে। তিনদিন এখানে থাকবার ব্যবস্থা আছে স্টেটের খরচে—তারপর থাকতে হলে অনুমতি-পত্রের মেয়াদ বাড়িয়ে আনতে হয় রাজদপ্তর থেকে । প্রকৃতপক্ষে অনেকে সাতদিন আটদিন কি তার বেশিও থাকে, চাকরবকিরদের কিছু দিলে তারাই ওসব করে নিয়ে এসে দেবে। আমি গিয়ে দেখি অত বড় বাংলোতে একজন মাত্র সঙ্গী—আর কোনো অতিথি তথন নেই। জিজ্ঞেস করে জানলুম তিনি প্রায় মাসখানেকের বেশি আছেন রাজ অতিথিরূপে। ইনি অদ্ভুত ধরনের মানুষ—একাধারে ভবঘুরে দার্শনিক, কবি ও মাইনিং এঞ্জিনিয়ার। অনেক দিন হয়ে গেলেও এই ভদ্রলোকের কথা আমার অতি স্পষ্ট মনে আছে । আমার বইগুলির দু একটি চরিত্রের মূলেও ইনি প্রচ্ছন্নভাবে বর্তমান। পরে এর কথা আরও বলচি। আগরতলা ছোট শহর, রাজপথে বেজায় ধূলো, ঘরবাড়িগুলোও দেখতে ভালো নয়—এ শহরের কথা বলবার মতো নয়। আমার ভালো লেগেছিল মহারাজার নতুন প্রাসাদ, ছোট একটা চিড়িয়াখানার কয়েকটি বম্বজন্তু, ‘কুঞ্জবন প্রাসাদ ও বড় একটা ফুলের বাগান। আর ভালো লেগেছিল সুলেখক ও সুপণ্ডিত কর্নেল মহিমচন্দ্র দেব বর্মনকে । ইনি মহারাজের জ্ঞাতি ও খুল্লতাত, রাজদপ্তরে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন সে সময়ে, বৌদ্ধদৰ্শন ও ইতিহাসে তার যথেষ্ট পড়াশুনো। অত্যন্ত অমায়িক ভদ্রলোক, যখন আমি তার বাড়ি দেখা করতে গিয়েছিলুম তীর সঙ্গে, তখন আমি তরুণ-বয়স্ক, তার বয়স ছিল পঞ্চান্ন বৎসরের কাছাকাছি—কিন্তু আমার সঙ্গে সমবয়সী বন্ধুর মতো মিশেছিলেন, কত আগ্রহ করে তার বৌদ্ধগ্রন্থের লাইব্রেরি দেখিয়েছিলেন, সে কথা আমার আজও মনে আছে। মহারাজার নতুন প্রাসাদের বড় ফটকে বন্দুকধারী গুর্থ বা কুকি পাহারাওয়ালা দাড়িয়ে। অনুমতি ভিন্ন কাউকে প্রাসাদ দেখতে দেওয়ার নিয়ম নেই। একদিন আমি নিঃসঙ্কোচে ছড়ি ঘুরিয়ে সহজভাবে ফটকের মধ্যে ঢুকে গেলুম, যেন আমি নতুন লোক নই, মহারাজের প্রাসাদে বাতাৱাত করা আমার নিত্যকর্ম। কুকি পাহারাওয়াল