পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী 'לאלא আমি বললুম, তা কখনো হয়! আপনাকে যেতেই হবে। আপনার জন্তে আমরা বসে আছি দেখুন কতক্ষণ থেকে। তিনি কিছুতেই যেতে চাইলেন না। তার মুখ দেখে যেন বিষণ্ণ ও নিরুৎসাহ বলে মনে হল। আমার তখন কিছু মনে হয়নি কিন্তু তারপরে আমার এ ধারণা হয়েছিল যে ওঁর যাবার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চাদার একটি টাকা যোগাড় করে উঠতে না পেরে যাওয়া বন্ধ করেছিলেন হয়তো বা সকালে টাকার চেষ্টাতেই বেরিয়ে থাকবেন। - আমি বিশেষ নিরুৎসাহ হয়ে পড়লাম ভদ্রলোক না যাওয়াতে । কিন্তু কি করি, কোনো উপায় ছিল না। কুঞ্জবন প্যালেস ছাড়িয়ে আরও প্রায় দু মাইল পিছনে একটা ভাঙা বাড়ি আছে কাদের। সেখানে চারিদিকে ঘন বন, পাহাড়ী ঝরনা, মূলী বাঁশের ঝাড়, বাশবনের আড়ালে টিপ্রাইদের ক্ষুদ্র গ্রাম—চমৎকার নিরিবিলি জায়গা। একটা টিলার মাথায় সেই ভাঙা বাড়িটা। নীচে বাশবনের ছারায় ঝরনার ধীরে রান্নাবান্না করলাম, গান গাইলাম, কবিতা আবৃত্তি করলাম, কাঠ কুড়িয়ে আনলাম রায়ার জন্তে, জল তুললাম। গ্রাম থেকে টিপ্ৰাইদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দূরে দাড়িয়ে গভীর মুখে আমাদের কাও দেখতে লাগলো। বেলা যখন প্রায় তিনটে বাজে, তখন হঠাৎ 'বিভূতিবাবু! বিভূতিবাবু বলে কে যেন ডাকচে—দূর থেকে শুনতে পেলুম। আমরা সবাই উৎকৰ্ণ হয়ে রইলাম। বাশবনের ওপারের পথে টিলার পাশে দূর থেকে কে যেন ডাকচে ঠিকই। আমরা প্রত্যুত্তরে খুব জোরে হাক দিলাম, এই যে এখানে ! আমাদের একজন রাস্তার দিকে ছুটে গেল । অল্পক্ষণ পরেই দেখি আমার গেস্ট-হাউসের বন্ধুটি লম্বা লম্বা পা ফেলে বাশবন ভেঙে হাসিমুখে আমাদের দিকেই আসচেন। —এলুম আপনাদের কাছে, না এসে কি পারি। কাজটা শেষ হয়ে গেল, তাই বলি, যাই। তারপর, কতদূর হল ? অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে পেয়ে আমরা তো অত্যন্ত খুশী । আমার সত্যিই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ভদ্রলোক না আসাতে । তিনি বললেন—এসব জায়গা আমার পরিচিত, পায়ে হেঁটে কতবার এসেছি। আপনারা যখন বললেন কুঞ্জবন প্যালেসের উত্তরের পাহাড়ে যাবেন, তখনই ভেবেচি এই জায়গা। একটু চা খাওয়ান তো আগে, উঃ হাপিয়ে গিয়েচি– আমরা তাকে পেয়ে যেমন খুনী, তিনিও আমাদের পেয়ে তেমনই খুনী। একটু পরে আমরা সবাই মিলে গান আরম্ভ করলুম—তার মধ্যে দুজন রায় করতে লাগলো। আমার সঙ্গীটি তার বয়স ভুলে আমাদের সঙ্গে গানে আমোদে এমন করে যোগ দিলেন সে সেদিন বুঝলুম তার মনের তারুণ্য, যা জীবনের আর্থিক অসাফল্যে বিষ্ণুমাত্র प्लांब इब्बनि । সেইদিন রাত্রে ফিরে এসে তার জীবন সম্বন্ধে কিছু কিছু আমার বললেন। শুনে আমার পূর্বের অম্বুমান জায়ও দৃঢ় হল, লোকটি পয়লা নম্বরের ভবঘুরেও বটে, স্বপ্নালুও বটে।