পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8e WÒ আকাশে নবেম্বুলেখা ফুটে উঠতো আমার মাথার ঠিক উপরে। খুব বড় পাল উড়িয়ে মহাজনী বহর চলে যেতো নদী বেয়ে সন্দ্বীপে কি চাটগায়ে ! যাদের বাড়ি উঠেছিলাম, তারা এখানকার বেশ বড় ধরনের গৃহস্থ । কোনো পুরুষে কেউ কাজ করে না, বিস্তৃত ধানের জমির ফসলে বছর চলে যায়—বাড়িতে অনেক গোরু, হাস ও ছাগলের পাল । অামি থাকতাম বাইরের একটা ঘরে। সেদিন বেড়িয়ে ফিরলে গৃহস্বামী আমার কাছে তামাক টানতে টানতে গল্প আরম্ভ করলেন। আমার কৌতুহল হল ওঁদের জীবনযাত্র সম্বন্ধে खनिवiब्र । জিগ্যেস করলাম—আপনাদের এ বাড়ি কতদিনের ? —আজি প্রায় বিশ বছরের, এদিকে ভাঙন ধরেনি অনেক দিন । —ধানের জমিতেই আপনাদের চলে বোধ হয় ? —ত আড়াইশো বিঘে জমি আছে। —নিজেরা লাঙলে চাষ করেন, না ভাগে ? —বৰ্গ দিই, অত জমি কি নিজ লাঙলে চষা যায়। —ধান ছাড়া অন্ত কোনো চাষ আছে ? —আর যা আছে তা সামান্তই। ধানই এদেশের প্রধান ফসল। গোলার ধান বেচে সংসারের কাপড়চোপড়, ওষুদ্রবিমুদ, বিয়ে-খাওয়া সব হয়। শুধুমাত্র ধানের ফসলের ওপর এখানকার জীবনযাত্র প্রতিষ্ঠিত। দেখেচি সকালে উঠে ছেলেমেয়েরা পান্ত ভাত খায়, বড়লোকেরা খায় চিড়ে, মুড়ি বা খই। মুড়ির চেয়ে এখানে চিড়ে বা খইয়ের চলনই বেশি। দুপুরে গরম ভাত-বিকেলে ছেলেমেয়েদের জন্তে আবার বাসি ভাত বা খই চিড়ে। রাত্রে সকলের জন্তে আবার গরম ভাত। ধান থেকে যা পাওয়া ধার—তা ছাড়া অন্ত কোনো খাদ্য এখানে মেলে না, পেতেও এরা অভ্যস্ত নয়। অবিপ্তি তরিতরকারি মাছ দুধের কথা বাদ দিই। ফলের মধ্যে নারিকেল ছাড়া অন্ত কিছু পাওয়া যায় না। যেদিন সন্ধ্যাবেল আমি এখান থেকে চলে যাই, সেদিন সকালবেল গৃহস্বামী বৈষয়িক কাজে কোথায় চলে গেলেন। আমি তার কাছে বিদায় নিয়ে রাখলুম ; তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হলেন যে, আমার যাবার সময় তার সঙ্গে দেখা হবে না। বাড়িতে পুরুষমামুষের মধ্যে একজন চাকর, ক্ষেত থামারের কাজ দেখে আবার ক্ষেতের ভরি-তরকারি হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। আমার খাওয়ার জায়গা বাইরের ঘরের সঙ্গে একটা ছোট কুঠুরিতে হত, এদিন সে-ই থাবার সময় উপস্থিত রইল। মেয়েরা আমার সামনে বেরুতেন না, ভাত দিয়ে তারা চলে যেতেন,খেতে বলে কোনো জিনিসের দরকার হলেন-দশ বছরের একটি ছোট মেয়ে নিয়ে আসতো। * সন্ধ্যার পূর্বে গরুর গাড়ি এল। আমি জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে দিতে বললাম। এমন সময় সেই ছোট মেয়েটি এসে বললে—বাড়ির মধ্যে আমুন—ডাকচে মা