পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত Yoል আপন মনে ভাঙ্গিত গড়িত—হাতে খরচ নাই, ফুটা বাড়িতে জল পড়ে বৃষ্টির রাত্রে, পাড়ায় মুখ পার না, সকলে তুচ্ছ করে, তাচ্ছিল্য করে, মানুষ বলিয়াই গণ্য করে না—সে সব দিনের স্বতির সঙ্গে, আমরুল শাকের বনে পুরানো পাচিলে দীর্ঘছায়ার সঙ্গে যে সব দুৰ্বকালের দুরাশার রঙে রঙিন ভবিষ্যৎ জড়ানো ছিল—এই তো এতদিনে তাহারা পৃথিবীর মাটিতে নামিয়া আসিয়াছে । পূজার কাজে অপুর অত্যন্ত উৎসাহ । রোজ সকালে উঠিয়া সে কলুপাড়ার একটা গাছ হইতে রাশীকৃত কচি কচি বেলপাত পাড়িয়া আনে! একটা খাতা বধিয়াছে, তাহাতে সর্বদা ব্যবহারের সুবিধার জন্ত নানা দেবদেবীর স্তবের মন্ত্র, স্বানের মন্ত্র, তুলসীদান প্রণালী লিখিয়া লইয়াছে। পাড়ায় পূজা করিতে নিজের তোলা ফুল-বেলপাত লইয়া যায়, পুজার সকল পদ্ধতি নিখুঁতভাবে জানা না থাকিলেও উৎসাহ ও একাগ্রতায় সে সকল অভাব পূরণ করিয়া লয় । বর্ষাকালের মাঝামাঝি অপু একদিন মাকে বরিল যে, সে স্কুলে পড়িতে যাইবে। সর্বজয়া আশ্চর্য হইয় তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, কোন ইস্কুলে রে ? —কেন, এই তো আড়বোয়ালেতে বেশ ইস্কুল রয়েচে । —সে তো এখেন থেকে ধেতে-আসতে চার ক্রোশ পথ। সেখানে যাবি হেঁটে পড়তে ? সৰ্ব্বজয়া কথাটা তখনকার মত উড়াইয়া দিল বটে, কিন্তু ছেলের মুখে কয়েকদিন ধরিয়া বার বার কথাটা শুনিয়া সে শেষে বিরক্ত হইয়া বলিল, যা খুশি করো বাপু, আমি জানি নে । তোমরা কোনো কালে কারুর কথা তো শুনলে না ? শুনবেও না—সেই একজন নিজের খেয়ালে সারাজন্ম কাটিয়ে গেল, তোমারও তো সে ধারা বজায় রাখা চাই ! ইস্কুলে পড়বো! ইস্কুলে পড়বি তো এদিকে কি হবে ? দিব্যি একটা যাহোক দাড়াবার পথ তবু হয়ে আসছে —এখন তুমি দাও ছেড়ে—তারপর ইদিকেও যাক, ওদিকেও যাকৃ— মায়ের কথায় সে চুপ করিয়া গেল । চক্রবর্তী মহাশয় গত পৌষ মাসে কাশী চলিয়া গিয়াছেন, আজকাল তাহাকেই সমস্ত দেখিতে শুনিতে হয়। সামান্য একটু জমি-জমা আছে, তাহার খাজনা আদায়, ধান কাটাইবার বন্দোবস্ত, দশকর্ম, গৃহদেবতার পূজা । গ্রামে ব্রাহ্মণ নাই, তাহারাই একঘর মোটে। চাষী কৈবর্ত ও অন্যান্ত জাতির বাস, তাহা ছাড়া এ-পাড়ার কুণ্ডুরা ও ওপাড়ার সরকারেরা। কাজে কর্মে ইহাদের সকলেরই বাড়ি অপুকে ষষ্ঠ পূজা মাকালপূজা করিয়া বেড়াইতে হয়। সবাই মানে, জিনিসপত্র দেয়। সেদিন কি একটা তিথি উপলক্ষে সরকার-বাড়ি লক্ষ্মীপূজা ছিল। পূজা সারিয়া খানিক রাত্রে জিনিসপত্র একটা পুটুলি বাধিয়া লইয়া সে পথ বাহিয়া বাড়ির দিকে আসিতেছিল ; খুব জ্যোৎস্না, সরকার বাড়ির সামনে নারিকেল গাছে কাঠঠোক্রা শব্দ করিতেছে। শীত বেশ পড়িয়াছে ; বাতাস খুব ঠাণ্ড, পথে ক্ষেত্র কাপলির বেড়ায় আমড়া গাছে বউল ধরিয়াছে। কাপালিদের বাড়ির পিছনে বেগুনক্ষেতের উচুনিচু জমিতে এক জায়গায় জ্যোংক্স दि. ब्र. २-२ g