পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8e.8 বিভূতি-রচনাবলী আমি ভাবলাম আমার ভুল করে ডাকচে, ছেলেমানুষ। আমার কেন ডাকবেন তারা ? বললুম—কাকে ডাকচেন খুকি ? আমি নয়, তোমার ভুল হয়েছে। —না, মা বললেন আপনাকে ডেকে নিয়ে আসতে— অগত্যা খুঁকির সঙ্গে আমি বাড়ির মধ্যে গেলাম। গিয়ে দেখি নীচুমত চালা-ওয়ালা একটা দাওয়ায় একখানা আসন পাতা, তার সামনে থালায় খাবার সাজানো । খুকি বললে—আপনাকে মা খেতে বলচেন—আপনি গাড়িতে যাবেন, কোথাও খাওয়া হবে কি না, খেয়ে নিন। আমি সত্যই অবাক হয়ে গিয়েচি তথন । এখান থেকে চার মাইল দূরবর্তী স্টেশনে গিয়ে রেলে চাপবো এবং প্রায় সারারাতই ট্রেনে কাটাতে হবে—এ অবস্থায় খাওয়া হবে না তো নিশ্চয়ই, কিন্তু মেয়েরা সেকথা আন্দাজ করলেন কি করে—এই ভেবে আমি আশ্চর্য না হয়ে পারলুম না। খেতে বসে গেলুম অবিহি। আমি ব্রাহ্মণ মানুষ, স্বর্য ডুববার পূর্বে ছ বার ভাত খাবো না—বোধ হয় এই কথা ভেবে মেয়ের খেতে দিয়েচেন চিড়ে খইয়ের লাড়ু, নারকোলের লাডু, মুড়কি, দুধ, কলা ইত্যাদি। আমার মনে আছে ছোটবড় নানা আকারের লাড়, কতগুলো খেলার মার্বেলের মতে ছোট । যতক্ষণ থালার সমস্ত খাবার নিঃশেষ না করলাম, ততক্ষণ মেয়ের ছাড়লেন না—ছোট মেয়েটিকে দিয়ে বারবার অনুরোধ করতে লাগলেন এটা খেতে ওটা খেতে। তাদের আগ্রহে ও আন্তরিকতায় আমার মনে যে ভাব জাগলো—তা হল নিছক বিস্ময়ের ভাব । কেন আমাকে খাওয়ানোর জন্তে এদের এত আগ্রহ ? অতিথি বিদায় নিয়ে গেলে তো ঝামেলা মিটে যায়—সে লোকটী রাত্রে আবার পেট ভরে খেলে না থেলে তার জন্তে মাথাব্যথা করার কার কি গরজ ? জগতে নিঃস্বার্থ স্নেহ ও সেবা খুব বেশি দেখা যায় না বলেই অনেক বৎসর পূর্বের সেই সন্ধ্যায় সেই অজানা গৃহলক্ষ্মীদের স্নেহের স্থতি আমার মন থেকে আজও মুছে যায়নি। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর পুল পার হয়ে আবার ট্রেন এসে থামলো ঘোড়াশাল স্টেশনে । ঘোড়াশাল ঢাকা জেলার—এখান থেকে কিছুদূরে নরসিংদি গ্রামের হাইস্কুলে আমার এক বন্ধু হেডমাস্টার, অনেকদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি, বিদেশ-ভ্রমণের সময় পরিচিত বন্ধুজনের দেখাসাক্ষাৎ বড় আনন্দদান করে, সেজন্তে ঠিক করেছিলাম ঢাকা যাবার পথে বন্ধটির ওখানে v१करांद्र ६ों८दl ! নরসিংদি বেশ বড় গ্রাম, তবে স্কুলের জায়গাটি কিছু দূরে, গ্রামের বাইরে মাঠের মধ্যে স্কুল। আমি যখন গিয়ে সেখানে পৌঁছলাম—তখন বেলা প্রায় এগারোটা । একটি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতে বললে, হেডমাস্টারবাবু এখন ক্লাসে আছেন।