পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२० বিভূতি-রচনাবলী হেমেন বললে—ঠিক পথে যাচ্চি তো ? —তা কি করে বলবো? তবে অন্ত পথ যখন নেই—তখন মনে হচ্চে আমরা ঠিকই চলেচি। –বন যে রকম ঘন, কোনো রকম জানোয়ার থাকা অসম্ভব নয় হে, একটু সাবধানে চলো। আমরা পাহাড়ের মাথায় উঠে দেখি আমাদের সামনে দিয়ে পথটা আবার নীচের উপত্যকায় নেমে গিয়েচে । আমরাও নামতে লাগলুম সে পথ ধরে। 蠻 একেবারে উপত্যকার মধ্যে নেমে এলুম যখন, তখন চোখে পড়লো ওদিকে আর একটা পাহাড়শ্রেণী, এর সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলে গিয়েচে, মধ্যে এই বনাকীর্ণ উপত্যকা—বিস্তৃতিতে প্রায় দু তিনশো গজ হবে। শালবনের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি পাহাড়ী নদী রাঙা বালির ওপর দিয়ে বয়ে চলচে—পায়ের পাতা ডোবে না এত অগভীর। হেমেন জল থাবেই, আমি নিষেধ করলুম। বিশ্রাম না করে জলপান করা যুক্তিযুক্ত হবে ন i বরং তার আগে স্নান করে নেওয়া যাক। কিন্তু স্নান করি কোথায় ? অত অগভীর নদীর জলে স্নান করা চলে না। হেমেন বললে—তুমি বোসে, আমি বনের মধ্যে কিছুদূর বেড়িয়ে দেখে আসি, জল কোথাও বেশি আছে কিনা— বেলা ঠিক একটা, বাঁ। বৰ্ণ করচে থর রোদ, কাচা শালপাতা বিছিয়ে বনের ছাপ্পীয় শুয়ে পড়লুম—যেমন ক্ষুধা, তেমনি তৃষ্ণ, দুইই প্রবল হয়ে উঠেচে। অদ্ভুত ধরনের নির্জনতা এ উপত্যকার মধ্যে—এরই নাম কাজরা ভ্যালি বোধ হয়--কেই বা বলবে এর ওই ইংরেজী নাম কি না ? হেমেনকে এক ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি, কারণ এমন নির্জন মন্থয়বসতি শূন্ত স্থানে বন্যজন্তুর আকস্মিক আবির্ভাব বিচিত্র কি ! কেউ কোথাও নেই, এই সময় এক বনচ্ছায়ায় শায়িত অবস্থায় এই উপত্যকার সৌন্দর্য ও নিবিড় শাস্তি ভালো করে আমার মনে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে গেল। এইখানে "বুদ্ধ নারিকেল ( Starculia Alata ) নামে মুবৃহৎ বনস্পতি প্রথম দেখি—তারপর অবিপ্তি মধ্যভারতের অরণ্য-প্রদেশে এই অতি বৃহৎ বৃক্ষ দেখেচি। নাম যদিও 'বুদ্ধ নারিকেল’—এগাছের চেহারা দেখতে অনেকটা বিড়িপাতার গাছের মতো—প্রকাণ্ড মোটা গুড়ি, ভীষণ উচু, সোজা খাড়া ঠেলে উঠেচে আকাশের দিকে, চওড়া বড় বড় অনেকটা তিক্তিরাজ গাছের মতো পাতা—পত্রসমাবেশ অভ্যন্ত ঘন । বনস্পতিই বটে, এর পাশে শাল গাছকে মনে হয় বেঁটে বন্ধু। অবিস্তি ও জঙ্গলে কি ভাবে এ গাছের নাম জানলুম তা পরে বলবো। কিছুক্ষণ পরে হেমেন ফিরে এসে আনন্দের সঙ্গে বললে—খুব ভালো স্বানের জায়গা আবিষ্কার করে এলুম, বেশ একটা গভীর ডোবার মতো—চলে। আমি জিনিসপত্র নিয়ে যেতে চাইলুম। হেমেন বললে—এইখানে থাক না পড়ে, তুমিও যেমন, কে নেবে এই জঙ্গলে ? আমি বললুম—থাক। তবে খাবারের পুটুলিটা নিয়ে যাওয়া যাক, নেয়ে উঠে সেখানে