পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२२ বিভূতি-রচনাবলী একদিকে মন্দিরের কুড়ি হাত দূরে বা পাশে একটা বড় ঝরনা পাহাড়ের ওপর থেকে পড়চে আমাদের সামনে একটা গুহা—গুহায় ঢুকবার জায়গাটাতেই মন্দির, পাহাড়ের একেবারে তলায় । বহুপ্রাচীন জায়গাটাতেই মন্দির, দেখলেই বোঝা যায়। নির্জন স্থান, দুদিকে পাহাড়শ্রেণী, মধ্যে এই সুন্দর উপত্যকা—প্রাচীন ভারতের পবিত্র আশ্রমপদের ছবি মনে জাগায় বটে ! রোদ তখন পড়ে আসচে, পশ্চিম দিকের পাহাড়শ্রেণীর ছায়া পড়েচে উপত্যকায়— কত কি পার্থী ডাকচে চারিদিকের গাছপালায় । হেমেন ও বললে—বড় সুন্দর জায়গাটি তো ! আমাদের চোখের সামনে আশ্রমের ছবিকে পূর্ণতা দান করবার জন্থেই যেন এক সন্ন্যাসিনী মন্দির থেকে বেরিয়ে এলেন। আমরা তো অবাক! এই বনের মধ্যে সন্ন্যাসিনী ! সন্ন্যাগিনী আমাদের দেখতে পেয়ে কাছে এলেন। তেমন মুন্দরীও নন, বিশেষ তরুণীও নন। বয়স ত্রিশের ওপর, তবে দেহের বর্ণ মুন্দর, অনেকটা গঙ্গাজলী গমের মতো। মাথায় একটাল কালে চুলে কিছু কিছু জট বেঁধেচে। পরনে গৈরিক বসন । আমাদের হিনিতে বললেন—কোথা থেকে আসচ ছেলেরা ? —ভাগলপুর থেকে মাঈজী। -- কি জাত ? —আমরা দুজনেই ব্রাহ্মণ । —হেঁটে এলে ? —আজ্ঞে । কাজরা স্টেশনে বেল নটর সময় নেমে হাটচি । —আজ তোমরা ফিরতে পারবে না। এইখানেই থাকে। আমি হেমেনের মুখের দিকে চাইলুম। তারপর দুজনে মিলে চারিদিকে চাইলুম—থাকবে। কোথায় ? ঘরদোর তো কোনোদিকে দেখি না। গাছতলায় নিশ্চয়ই রাত্রিযাপন করার প্রস্তাব করেননি মাতাজী । সন্ন্যাসিনী বললেন-বাবা, তোমরা থাকো, থাকতেই হবে—সন্ধ্যা হবে সামনের পাহাড় পেরিয়ে যাবার আগেই হয়তো । তা ছাড়া, দরকারই বা কি কষ্ট করে যাবার ? থাকবার ভালো জায়গা আছে। কিন্তু কোথায় ? চোখে তো পড়ে না কোনোদিকে। হেমেন ও আমি আর একবার চারিদিকে চেয়ে দেখলুম। হেমেন চক্ষুলজ্জা বিসর্জন দিয়ে বললে—মীতাঞ্জী, আমরা থাকব কোথায় ? সন্ন্যাসিনী হেসে বললেন—মন্দিরে। বাইরে থেকে বোঝা যায় না। গুহার ভেতরে মন্দির বাদে দুই কামরা। কোনো কষ্ট হবে না। আমরা একবার দেখতে চাইলুম জায়গাটা । মাতাজী আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। মম্বিরের গায়ে ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি প্রত্যেক পাথরে খোদাই। বৌদ্ধযুগের চিহ্ন মন্দিরের সর্বাঙ্গে --বৌদ্ধমন্দির কবে হিন্দু তীর্থস্থানে পরিণত হয়েচে ডায় সঠিক ইতিহাস সন্ন্যাসিনী কিছুই