পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 বিভূতি-রচনাবলী হেমেন বললে, মাতাজী, আপনার দেশ কোথায় ? —গৃহস্থ-আশ্রিমের নাম বলতে নেই। তবুও বলি আমার বাড়ি ছিল এই বেণ্ডসরাইয়ের কাছেই। আমি এ দেশেরই মেয়ে। আমার চাচা আগে এ আশ্রমের সেবাইত ছিলেন, তারপর থেকে আমি আছি । এতক্ষণে অনেকখানি ব্যাপার আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। এই দেশের মেয়ে এবং সম্ভবত বাল্যকাল থেকে ওঁর চাচাজীর সঙ্গে এখানে অনেকবার গিয়েচেন এসেচেন । অনেকেই চেনে এদেশে । আমি বললুম, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো মাতাজী, মাপ করবেন, আপনি কি বিবাহ করেন নি ? —আমি বিধবা, তেরো বছর বয়সে স্বামীর মৃত্যু হয়, সেই থেকেই গৈরিক ধারণ করেচি। তারপর তিনি নিজের জীবনের অনেক কথা বলে গেলেন। ওঁর কথার মধ্যে একটি সতেজ সজীব নারীমনের পরিচয় পেয়ে আমি ও আমার বন্ধু দুজনেই যেন এক নূতন জগৎআবিষ্কারের আনন্দ অনুভব করলুম, ভেবে দেখলুম এই সন্ন্যাসিনীর যদি বয়স আরও কম হত তবে এর জীবনের ইতিহাস শুনে আমরা অন্তত মনে মনেও এর প্রেমে না পড়ে পারতুম না—সেই বয়সই ছিল আমাদের। হেমেন বললে, আপনাকে এ বনে খাবার-দাবার কে এনে দেয় ? —কিউল থেকে আমার শিষ্ণুর আসে, ওরাই নিয়ে আসে, হস্তায় দুদিন । —আপনি সত্যিই অদ্ভুত মেয়ে। এ রকম মেয়ের সাক্ষাৎ বেশি পাওয়া যায় না। —কিছু না, পরামাত্মা যখন ডাকেন, তার সব কাজ তিনিই করিয়ে নেন। আমি বিধবা হয়ে একমনে তাকে ডেকেচি, ঘরের বাইরে আসবার চেষ্টা করেচি যে কত সংসার আদৌ ভালো লাগতো না, বাইরে বেরুতে ইচ্ছে থাকতো কেবল। জপতপ করবার কত বাধা সংসারে। আমি—আমাদের বেগুসরাইয়ের বাড়ির পিছনে ছোট একটি তেঁতুল গাছ আছে— কাছেই কিউল নদী— আমি বললুম, বেগুসরাই মহকুমা ? সেখানে তো— —এই লক্ষ্মীসরাইয়ের কাছে বেগুসরাই, ছোট্ট গী—কিউল নদীর ধারে । তারপর শোনো ছেলেরা, কিউল নদীর ধারে সেই তেঁতুল গাছের কাছে বসে বসে কতদিন ভগবানকে ডেকেচি যে, আমার একটা উপায় করে দাও, সংসার আমার বড় খারাপ লাগচে । ভগবানকে ডাকলে তিনি শোনেন । —কি করে জানলেন ? —আমি প্রত্যক্ষ ফল পেয়েচি—একমনে ডাকলৈ না শুনে তিনি থাকতে পারেন না। আমার একটু আমোদ লাগলো, কারণ সে সময় আমি নিজে ছিলাম ঘোর agnostic, লেসলি স্টিফেনের দার্শনিক মতে অনুপ্রাণিত, ভগবানকে মানি না যে তা নয়, কিন্তু তার অস্তিত্বের সন্ধান কেউ জানে না, দিতেও পারে না—এই ছিল আমার মত।