পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8මී6: ত্রিশ চল্লিশ টাকা মাইনের কেরানিগিরি যোগাড় করতে পারলে আমরা জীবন ধন্ত মনে করি – দুঃখের বিষয়, তাও জোটে না। আমাদের মধ্যে দেশবিদেশে গিয়ে নিজেকে অষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠা করার কল্পনাই জাগে ন—তাই আমাদের দুঃখ । স্ত্রীরাম পাড়ে রাত্রে আমায় থাকতে বললে। মোহান্তজীও বললেন— বাবুজি, আমার ওখানে থাকবার জায়গা নেই ভালো—সেইজন্তে এখানে আনলাম। মন্দিরে আপনাদের দরের অতিথি এলেই পাড়েজীর বাড়িতে রাখি। পড়েজী বড় ভালো লোক। রাত্রে কোথায় যাবেন—এখানেই থাকুন। আমারও এত ভালো লেগেছিল পাড়েজীকে, তখুনি রাজি হয়ে গেলাম। এর এই ব্যবসার কথা ভালো করে জেনে গিয়ে বাংলা দেশের বেকার যুবকদের যদি একটা পথ দেখিয়ে দিতে পারি, মন্দ কি ? রাত্রে আমার জন্তে উৎকৃষ্ট ঘিয়ে তৈরী পুরী আর হালুয়া, কি একটা তরকারি আর গরম দুধ এনে হাজির করলে পড়েজীর রাধুনি ব্রাহ্মণ। সে ধরনের ঘিরে তৈরী খাবার বাংলাদেশে আমি কখনো চোখেও দেখিনি, পশ্চিমেও নয়—কেবল আর দু-একটা জায়গা ছাড়া। পাড়েজীকে বললুম—ভাগলপুরের বাজারেও তো এমন ঘি মেলে না। কি চমৎকার গন্ধ। ভয়স বি কি এমন হয় ? পাড়েজী হেসে বললে—কোথায় পাবেন বাবুজি ? ঘি যা বাজারে আপনার পান, তা হল পাইল করা, অর্থাৎ অন্ত বাজে ঘি বা চৰ্বি মেশানো । ভেজাল ভিন্ন ঘি বাজারে নেই জানবেন, যে যত বিজ্ঞাপনই দিক। তবে কোনো ঘিয়ে কম, কোনো ঘিয়ে বেশি ভেজাল—এই যা তফাত । আর এ হল আমার কারখানায় সদ্য তৈরী থাটি ভয়সা । এ কোথায় পাবেন বাজারে ? মোহাস্তজীও আমার সঙ্গে ভোজনে বসেছিলেন। দেখলুম যদিও তার বয়স হয়েচে–কিন্তু আমার মতো তিনটি লোকের উপযুক্ত পুরী, তরকারি ও হালুয়া অবাধে উদরসাৎ করলেন। মোহাস্তজীকে আমার বড় ভালো লাগলো, এমন নিরীহ সজ্জন মাহ্য খুব কম দেখা যায়। এক এক জায়গায় এক এক ধরনের মাছুষের ছাচ থাকে—অন্যত্র তা পাওয়া যায় না। আমার মনে হয়, বাংলার বাইরে আমি নিছক নিরীহ, সরল ও ভালোমানুষ লোকের যে ছাঁচ দেখেচি, বাংলাদেশে তা দেখিনি। হয়তো ঠিক ব্যাপারটা বোঝাতে পারচিনে–কিন্তু একথা খুব সত্যি, বাংলার অতি অজ পাড়াগায়েও লোকের খানিকটা কুটিল বুদ্ধি, খার্নিকটা আত্মসম্মান-জ্ঞান, খানিক চালাকচতুরতা আছে। এসব থাকলেই আর লোক নিছক সরল টাইপের হল না। তা মেয়েদের কথাই বা কি, আর পুরুষদের কথাই বা কি। এর কারণ বাঙালীর মধ্যে অভিনিবোধ লোক নেই বললেই হয়—ওদের অনেকখানি জন্মগত শিক্ষা-দীক্ষা আছে—তাতে সংসারের অনেক ব্যাপারে ওদের অভিজ্ঞতা আপনা-আপনি হয়—রেলে বা স্টীমারে এক স্থান থেকে আর এক স্থানে ধাতায়াতের বেশি স্ববিধে বাংলাদেশে। তা থেকেও লোকে অনেক বাইরের জ্ঞান সঞ্চয় করতে পারে।