পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

889. বিভূতি-রচনাবলী ফলের কথা বাদ দিয়ে এবার বন্য ফুলের কথা বলি । বন্ত পুষ্পের বিচিত্র শোভার কথা শোনা যায় বটে, কিন্তু সব অঞ্চলের সব অরণ্যের বেলায় সে কথা থাটে না। সাধারণত ধরে নিতে হবে মুখাদ্য ফলের স্তায় নয়নানন্দদায়ক পুষ্পের দর্শনও মানুষের তৈরী উদ্যানেই মেলে—প্রকৃতি-রচিত আরণ্য অঞ্চল মামুষের মুখ-সুবিধার দিক থেকে দেখতে গেলে বড় কৃপণ । অতএব যে কোনো বড় অরণ্যে ঢুকলেই যে বন-পুষ্পের শোভায় মন মুগ্ধ করবে এ যিনি ভাবেন, তিনি অরণ্য দেখে নিরাশ হবেন । বনের ফুল ফোটে বিশেষ বিশেষ ঋতুতে, তাওঁ দু এক রকম মাত্র ফুল সেই সেই ঋতুতে দেখা যায়—নানা ধরনের ফুল একসঙ্গে কখনোই দেথা যায় না। সে দেখা যায় মামুষের হাতের ফুলের বাগানে। যিনি বহুবিধ রঙীন পুষ্পের বিচিত্র সমাবেশ দেখতে ভালোবাসেন, র্তাকে যেতে হবে আলিপুরের হর্টিকালচারাল সোসাইটির উদ্যানে ; অন্তত আমি এমন কোনো অরণ্য দেখিনি, যেখানকার বিচিত্র বন্তপুষ্পশোভা তাকে অতটা আনন্দ দিতে পারবে। বসন্তে দেখেচি সিংডুম ও উড়িয়ার অরণ্যে গোলগোলি ফুলের বড় শোভা। কিন্তু সব বনে এ গাছ দেখা যায় না, কোনো বনে আছে, কোনো বনে আদৌ নেই। এই গাছ দেখতে ঠিক একটি পত্রহীন আমড়া গাছের মতে, কিন্তু কখনোই খুব বড় হয় না। বসন্তে পাতা ঝরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফোটে, ফুলগুলির আকৃতি ও বর্ণ অনেকটা স্বর্যমুখী ফুলের মতো। বনের সবুজ পাতার মধ্যে এখানে-ওখানে এক একটা শুভ্রকাও, নিম্পত্র, আঁকাবাকা গোলগোলি গাছ হলদে ফুলে ভরা দাড়িয়ে আছে—এ দৃপ্ত যিনি একবার দেখেচেন, তিনি কখনো ভুলবেন না। এ ছবি আরও অপূর্ব হয়, যদি কাছে বড় বড় অনাবৃত শিলাখণ্ড থাকে। উদ্ভিদতত্ত্ববিদ হকার উার প্রসিদ্ধ ‘হিমালয় জার্নাল’ নামক গ্রন্থে গোলগোলি ফুলের সৌন্দর্যের যথেষ্ট মুখ্যাতি করেচেন—তার বইএ নিজের হাতে আঁকা ছবিও আছে এই ফুলের। বসন্তে আরও দু এক প্রকারের ফুল দেখেচি এই অঞ্চলের বনে, যেমন লোহাজাঙ্গি ও বর্ণটি ফুল। এদের ফুল হয় অনেকট চামেলি ফুলের মতো—তবে গন্ধহীন। পলাশ সর্বত্র নেই—যেখানে আছে, যেমন পালামেী ও রাচি অঞ্চলের প্রাস্তরে ও বনে, সেখানে রক্তপলাশের শোভা বড় অদ্ভুত হয়। কিন্তু প্রাস্তুর ছাড়া পার্বত্য অরণ্যে পলাশ গাছের ভিড় বড় একটা থাকে না। শাল ফুলের মুগন্ধ আছে—কিন্তু দেখতে বিশেষ কিছু নয়। মহুয়া ফুলের সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। কোনো কোনো বনে বর্ষা ঋতুতে কুরচি ফুল যথেষ্ট দেখা যায়—বিশেষ করে লিঙ্কুেম অঞ্চলে । শিমুল ফুল বনের মধ্যে ফুটে গাছ আলো করে থাকলে যে কি শোভা হয়, ধারা বেঙ্গল নাগপুর রেলপথের শৈলবনের স্টেশনঘেরা উভয়পার্শ্ববর্তী আরণ্য অঞ্চলে বসন্তে ভ্রমণ করেচেন, তারা বুঝতে পারবেন। ছখের বিষয় সিজুমের মাত্র এই স্থানটুকু ছাড়া অন্ত কোথাও বড় একটা শিমূল গাছ বনে দেখা যায় না। সাধারণত শিমূল গাছের স্থান বনে নয়, মানুষের