পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

843 বিভূতি-রচনাবলী রেখে দাও। আর খাওয়া-দাওয়ার ছাদাম করে নী—কেবল একটু চ যদি হত— সব বন্দোবস্ত করে দিচ্চি এখুনি। আপনারা স্টেটের অতিথি—খবেন না তা কি কখনো হয়। দেওয়ানজীলিখেচেন আপনাদের আদর-যত্বেরকোনোক্রটিনাহয়। আরটাকাকড়ির কথাবলচেন, এজংলী দেশে চার আনা পয়সার জন্তে অনেক সময় মানুষ খুন হয়। পাহারা রাখতেই হবে। রাত্রে পুরী ও হালুয়ার ব্যবস্থা করে দিলে রঘুনাথ পাটোয়ারী। একটা জিনিস লক্ষ্য করলুম, এমন চমৎকার ভয়সা ঘি আর কখনো দেখিনি কোথাও-লছমীপুর আর এই জয়পুর ডাকবাংলো ছাড়া। কলকাতার বাজারে আমরা যে জিনিস ভয়স ঘি বলে কিনে থাকি, তা আর যাই হোক, খাটি ভয়সা ঘি যে নয়, তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝলাম। এই রকম ঘি আর দেখেছিলুম বৈকুণ্ঠ পাড়ের বাড়িতে। পাটোয়ারীজীকে ডেকে বললুম—পুরী কি ঘিয়ে ভাজা ? —কেন বাবুসাহেব,ভয়স ঘিরে। —একটু নিয়ে এসে দেখাতে পারো ? একটা বাটিতে খানিকটা ঘি ওরা আমাদের কাছে নিয়ে এল—তার রং কলকাতার বাজারের ঘিয়ের মতো সাদা নয়—কটা, মাছের ডিমের মতো দানাদার। স্বগন্ধে ঠিক গাওয়াঘির মতো—বিশেষ কোনো প্রভেদ নেই। পাটোয়ারী বললে—বাবুসাহেব, দেহাত থেকে মাড়োয়ারীরা এই বি নিয়ে গিয়ে পাইল করে, মানে চৰ্বি আর অন্ত বাজে তেলের সঙ্গে কিংবা খারাপ ঘিয়ের সঙ্গে মেশায়--তারপর টিন-বন্দী করে বাজারে ছাড়ে। শহর বাজারে সেই জিনিস ভয়সা ঘি বলে চলে। খাটি ভয়ৰা ঘি কোথা থেকে আপনার বাজারে পাবেন ? রাত্রে মুনিদ্র হল,শরীর দুজনেরই ছিল খুব ক্লান্ত। একবার মাঝরাত্রে উঠে বাংলোর বাইরে এবে চেয়ে দেখলুম-দূরে লছমীপুরের জঙ্গলের সীমারেখা আলো-আঁধারে অদ্ভুক্ত দেখাচ্চে। আকাশে বৃহস্পতি ও শনি এক সরলরেখার অবস্থিত ; জলজল করচে বৃহস্পতি, তার নীচে কিছু দূরেই শনি মিটমিট করচে। বিশাল মাঠের সর্বত্র বড় বড়শাল ও মহুয়া ছড়িরে আছে দূরে দূরে। অন্নদূরেই ত্ৰিকূটের দুটি শৃঙ্গ আধো-অন্ধকারে আকাশে মাথা তুলে দাড়িয়ে। কি একটা রাতজাগা পাখী প্রাস্তরের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে মাঝে মাঝে কুস্বরে ডাকচে । ডাকবাংলোর বারদীয় রঘুনাথ পাটোয়ারীর দরওয়ান তিনটি নাক ডাকিয়ে অঘোরে ঘুমুচ্চে। বনগ্রাস্তরে যেন কি একটা অব্যক্ত রহস্ত থম্ থৰ্ম্ম করচে—যা মনেই শুধু অমুভব করা যায়–কিন্তু মুখে কখনো প্রকাশ করা সম্ভব নয় । পরদিন সকালে উঠে সকলের কাছে বিদায় নিয়ে পথে উঠলুম এসে। ছপুর পর্যন্ত ঘেঁটে মহিষ্কারডি বলে একটা গ্রামে এক আহীর গোৱালীর বাড়ি একটু জল চাইলুম। - গ্রামখানি ছোট-প্রায় সবই গোয়ালা অধিবাসী গ্রামে। বাড়ির মালিক বললে—কোথা থেকে আসচেন আপনারা ?