পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8NA —ভাগলপুর থেকে। —কিসে? —পারে হেঁটে, বৈদ্যনাথজী যাচ্চি। কথাটা শুনে শ্রদ্ধায় লোকটা অভিভূত হয়ে পড়লো। আমাদের বিশেষ অনুরোধ করলে আমরা যেন সে-বেলা তার আতিথ্য স্বীকার করি। খাওয়া-দাওয়া সেরে ওবেলা রওনা হলে রাত আটটার মধ্যে আমরা ত্রিকুটের পাদদেশে মোহনপুর ডাকবাংলোয় পৌঁছে সেখানে রাত কাটাতে পারি। আমাদের রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। অত রৌদ্রে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পথ হাটা চলবে না এবেলা । লোকটির নাম হরবংশ গোপ । সে বাড়ির সবাইকে ডেকে এনে আমাদের দেখিয়ে বললে—দেখ, কলিকালে ধর্ম নেই কে বলে ? বাবুজির ভাগলপুর থেকে পাওদলে আসচেন বৈদ্যনাথজীর মাথায় জল চড়াতে। অথচ বাবুর ইংরেজি বিদ্যের জাহাজ—মস্ত বড় এলেমদার লোক। দেখে শেখ । আমরা দুজনেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়লুম–এ প্রশংসা আমাদের প্রাপ্য নয়। তীর্থ করতে আমরা যাচ্ছিনে এই সওয়া-শো মাইল হেঁটে—এই সরল পল্লীবাসীরা সে কথা বুঝবে না। পুণ্যের আকর্ষণ ভিন্ন আর কিসের আকর্ষণে আমাদের এতখানি পথ টেনে এনেচে, তা এদের বোঝাতে গেলে আমাদের উন্মাদ ঠাওরাবে। অতএব ভক্ত তীর্থযাত্রী সেজে থাকায় জটিলতা নেই ভেবে আমরাও ওদের কথার প্রতিবাদ করে ওদের ভুল ভাঙবার আগ্রহ দেখালাম না। ওরা তারপর বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করলে আমরা কি খাবে। আমরা বললুম—যা হয় খেতে পারি। তার জন্তে ব্যস্ত হতে হবে না। আমাদের খাওয়া না হলেও চলবে । হরবংশ গোপ সে কথা শুনলে না। চাল ডাল বার করে দিলে—আমরা রোধে থাবো । ওইখানে পড়ে গেলুম মুশকিলে। পথে বার হয়ে এ পর্যন্ত রান্না করে খেতে হয়নি একদিনও। আমরা ওজর-আপত্তি করলুম-ওরা ব্রাহ্মণকে রোধে খাইয়ে জাত মারতে রাজি নয় । মহিষারডি গ্রামখানার অবস্থান স্থান বড় চমৎকার। বামে কিছুদূরে ত্রিকূট শৈল; ডাইনে খানিকট নাবাল জমি, তাতে শুধু বড় বড় পাথর ছড়ানো স্থার চার শালের বন—দূরে একটা বড় বনের শীর্ষদেশ দেখা যায়—খুব ফাক জায়গাটা । তা ছাড়া অনেক আকর্ষণ আছে। এ ধরনের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্বে ঐশ্বর্যবান গ্রাম রেলস্টেশনের কাছে থাকলে নিশ্চয়ই সেখানে কলকাতার লোকে বাড়ি না করে ছাড়তো না । গ্রামের যেদিকটা নাবাল জমি, তার বুড় ঢালুতে চার শালের বনে খুব বড় তিন চারখানা শিলাখণ্ড ঠিক যেন হাতীর মতো উচু ও বড়। অন্তত দুখান এমন শিলার ওপরে দ্বটি অজুন গাছের চারা ঠিক একেবারে পাথর ঘেঁষে দাড়িয়ে ও স্থটোতে যথেষ্ট ছায়াদান করচে। বেশ ওঠা যায় পাখরে—সকালে, বিকালে, রাত্রে ত্ৰিকূট শৈল ও পেছনদিকের মুক্ত প্রান্তরের দিকে