পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै९ বিভূতি-রচনাবলী লোকটা উত্তর দিল, সবই মারা যায়—খরগোস, শিয়াল, বেজী, এমন কি বাঘ পর্যন্ত । তবে বাঘ মারিবার সময় তীরের ফলায় অন্ত একটা লতার রস মাখাইয়া লইতে হয়।.তাহার পর সে তুতগাছতলায় শুকনা পাতালতার আগুন জলিল। অপুর পা আর সেখান হইতে নড়িতে চাহিল না—মুগ্ধ হইয়া দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল, লোকটা পাখিটার পালক ছাড়াইয়া আগুনে ঝলসাইতে দিল, বেগুনগুলাও পুড়াইতে দিল । বেলা অত্যন্ত পড়িলে অপু বাড়ি রওনা হইল। আহার শেষ করিয়া লোকটা তখন তাহার বোচক ও তীর ধন্থক লইয়া রওনা হইয়াছে। এ রকম মানুষ সে তো কখনো দেখে নাই। বাঃ-যেদিকে দুই চোখ যায় সেদিকে যাওয়া—পথে পথে তীর ধন্থক দিয়া শিকার করা, বনের লতাপাত কুড়াইয়া গাছতলায় দিনের শেষে বেগুন পুড়াইয়া খাওয়া ! গোটা আষ্টেক বড় বড় বেগুন সামান্ত একটু মুনের ছিটা দিয়া গ্রাসের পর গ্রাস তুলিয়া কি করিয়াই নিমেষের মধ্যে সাবাড় করিয়া ফেলিল!... মাস কয়েক কাটিয়া গেল। সকালবেলা স্কুলের ভাত চাইতে গিয়া অপু দেখিল রান্না চড়ানো হয় নাই। সর্বজয়া বলিল, আজ যে কুলুইচণ্ডী পুজো—আজ স্কুলে যাবি কি ক’রে ? ...ওরা বলে গিয়েচে ওদের পুজোটা সেরে দেওয়ার জন্তে—পূজোবারে কি আর স্কুলে যেতে পাবৃবি ? বড় দেরী হয়ে যাবে। —ই্য, তাই বৈ কি ? আমি পুজো করতে গিয়ে স্কুল কামাই করি আর কি ? আমি ওসব পারবো না, পুজোটুজো আমি আর করবো কি ক’রে, রোজই তো পূজো লেগে থাকবে আর আমি বুঝি রোজ রোজ–তুমি ভাত নিয়ে এস, আমি ওসব শুনছিনে— —লক্ষ্মী বাবা আমার। আচ্ছ, আজকের দিনটা পুজোটা সেরে নে। ওরা বলে গিয়েচে ওপাড়ামৃদ্ধ পুজো হবে। চাল পাওয়া যাবে এক ধামার কম নয়, মানিক আমার, কথা শোনো, শুনতে হয় । অপু কোন মতেই কথা শুনিল না। অবশেষে না খাইয়াই স্কুলে চলিয়া গেল । সর্বজয়ী ভাবে নাই যে, ছেলে সত্যসত্যই তাহার কথা ঠেলিয়া না থাইয়া স্কুলে চলিয়া যাইবে । যখন সত্যই বুঝিতে পারিল, তখন তাহার চোখের জল আর বাধা মানিল না। ইহা সে আশা করে নাই। অপু স্কুলে পৌছিতেই হেডমাস্টার ফণীবাবু তাহাকে নিজের ঘরে ডাক দিলেন। ফণীবাবুর ঘরেই স্থানীয় ব্রাঞ্চ পোস্ট-অফিস, ফণীবাবুই পোস্টমাস্টার। তিনি তখন ডাকঘরের কাজ করিতেছিলেন। বলিলেন, এসো অপূর্ব, তোমার" নম্বর দেখবে ? আজ ইন্সপেক্টর অফিস থেকে পাঠিয়ে দিয়েচে–বোর্ডের এগজামিনে তুমি জেলার মধ্যে প্রথম হয়েচ–পাচ টাকার একটা স্কলারশিপ পাবে যদি আরে। পড়ে। তবে । পড়বে তো ? এই সময় তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় ঘরে ঢুকিলেন। ফণীবাবু বলিলেন, ওকে সে কথা এখন বললাম পণ্ডিতমশাই। জিজ্ঞেস করচি জারও পড়বে তো ?