পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 866. মাঝে মাঝে প্রায়ই মনে হয় গ্রামখানির কথা। গত বৎসর বড়দিনের পরে কাৰোপলক্ষে একবার দেওঘর যেতে হয়েছিল, কতবার ভেবেছিলুম লছমীপুরের পথে গিয়ে একবার মহিষারডি গ্রামে হরবংশ গোপের সঙ্গে দেখা করে আসি, আবার ওদের রাঙামাটির সেই হাতীর মতো বড় পাখরখানার ওপর বসে আসি । কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছা সব সময় পূর্ণ হয় কই। মোহনপুর ডাকবাংলোয় আমরা পৌঁছে গেলাম বেলা দশটার মধ্যে। এই স্থানটিও খুৰ মুনার—ত্রিকূট-শৈলের পাদদেশে ডাকবাংলোটি অবস্থিত, দেওঘর থেকে বাউলি দিয়ে ষে রাস্ত গেছে, তারই ধারে। আমরা সেখানে বেশিক্ষণ ছিলাম না। ঘণ্টা দুই বিশ্রাম করে বেলা দুটোর সময় সেখান থেকে রওনা হবে ঠিক করেচি, কিন্তু অম্বিক বললে—এতদূর এসে একবার ত্রিকূট পাহাড়ে ওঠা দরকার। পাহাড়ে না উঠে যাবো না । দুজনে পাহাড়ে উঠতে আরম্ভ করলুম। প্রথম অনেকদূর পর্যন্ত কাটা-বাঁশের বন। পাহাড়ে উঠবার পথ বেশ ভালো, বড় বড় পাথরের পাশ বেয়ে ঝরনার জল গড়িয়ে আসচে–কিছুদূর উঠে জন-দুই সাধুর সঙ্গে দেখা হল। একজন বললেন—বাবুজির কোথেকে আসচেন ? —ভাগলপুর থেকে, পায়ে হেঁটে দেওঘর যাবো। —মপনাদের ধর্মে মতি আছে ; একালে এমন দেখা যায় না । সাধু বাবাজিদের কাছে মিথ্যে ভক্ত সেজে কি করব, আমরা খুলেই বললুম সব কথা। আমাদের আসল উদ্দেশ্য পায়ে হেঁটে দেওঘর আসা, বৈদ্যনাথজীদর্শন নয়, যদিও মন্দিরে নিশ্চয়ই যাবে এবং দেবদর্শনও করবে। ওঁরা আমাদের ঠাকুরের প্রসাদ খেতে দিলেন, হালুয়া ও দুটি কলা। আমরা কিছু প্ৰণামী দিয়ে সেখান থেকে নেমে এলুম। বেলা পড়ে এল পথেই—দেওঘর পৌছুতে প্রায় রাত আটটা বাজলো । ১৯৩২ সালে আমার একটি বন্ধু মধ্যপ্রদেশের রেওয়া স্টেটের দারকেশ বলে একটি ক্ষুদ্র পার্বত্য গ্রাম থেকে আমায় চিঠি লিখলেন, সেখানে একবার যাবার অনুরোধ করে। তার চিঠিতে স্থানটির অদ্ভুত প্রাকৃতিক দৃশ্বের কথা পড়ে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। মধ্য প্রদেশের ঘন বন ও পাহাড়ের মধ্যে গ্রামখানি অবস্থিত। তিনি সেখানে কণ্টক্টিরের কাজ করেন, ইদানীং কাঠের ব্যবসাও আরম্ভ করেছিলেন, দুতিনটি ভালো ঘোড়াও কিনেচেন, অনেক বুলি ও লোকজন তার হাতে, বনে বেড়াতে ইচ্ছা করলে তিনি সেদিকে যথেষ্ট সুবিধে করে দেবেন লিখেচেন। আমি কখনও মধ্যপ্রদেশে যাইনি তার আগে, বেঙ্গল নাগপুর রেলের গাড়ি চড়ে এমন কি কোনোদিন রামরাজাতলাতেও যাইনি। তিনি লিখলেন, বিলাসপুর খেকে ষে লাইন কাটনি