পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وائ\8 আমি বললুম—এত দেরি করে এলে কেন ? তোমাদের জন্সে স্টেশনে বসে বসে কাল छ्ब्रब्रांन श्ब्रक्रि । আসলে এদের চিঠি পেতে দেরি হয়েছিল। এ সব জংলী জায়গায় চিঠি বিলি হতে ছুএকদিনের এদিক-ওদিক হয়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। আমি আমার আগের ঘোড়াকে বিদায় দিয়ে নতুন ঘোড়ায় চড়লুম। নতুন সদীদের বললুম—বেলা তো এখুনি যাবে যাবো হল, রাত্রে কোথায় থাকা যাবে ? ওরা বললে—চোরামুখ গালার কারখানায়। —সে কতদূর ? —এখনও বাবুজি, আট মাইল। রাত সাতটায় সেখানে পৌছবো। পথের সৌন্দর্য সত্যই বড় চমৎকার। পথের বাঁ-পাশে একটা ছোট নদী একে বেঁকে চলেচে, অন্ত্রকণা মেশানো বড় বড় শিলা দিয়ে তার দুই পাড় যেন মাঝে মাঝে বাধানে। এক একটা গাছের কি আঁক-বাঁকা ভঙ্গি। পড়শী ও ভেলা গাছ এ অঞ্চলে প্রায় সর্বত্র, কিন্তু কোথাও বেশি বড় বন নেই। একটা পাহাড়ের আড়ালে স্বর্য অন্ত যাওয়ার দৃপ্তটা মুন্দর লাগলোঁ। তখন আকাশ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে স্থানে স্থানে নীল রং বেরিয়ে পড়েচে। কিছুক্ষণ পরে অন্ধকার হয়ে এল, তারপরেই অস্পষ্ট জ্যোৎস্না ফুটলো। দুতিনটি বস্তি পার হওয়া গেল রাস্তার। একটা বস্তিতে কি একটা পাঠ হচ্চে । চাঁদোয়ার নীচে বাতি জলচে, অনেকগুলি মেয়ে-পুরুষ পাঠককে ঘিরে দাড়িয়ে শুনচে । আমাদের দেশের কথকতার মতো। সন্ধ্যার পর বন আর চোখে পড়ে না, শুধুই একঘেয়ে মোরুম ছড়ানো বড় বড় মাঠ—এ মাঠে যদি ডাকাত পড়ে আমাদের সবাইকে খুন করেও যায়, তাহলেও কেউ দেখবে না। কোনো দিকে লোক নেই, একটা বস্তির আলোও চোখে পড়ে না। আমার মনে হয় পুরো দু ঘণ্টা লাগলে এই বিস্তীর্ণ প্রাস্তর পার হতে, অবিপ্তি ঘোড়া ছুটিয়ে যাবার উপায় ছিল না আমার—কারণ পথ চিনি না, সঙ্গের দুজন লোক ঘোড়ার পাশে হেঁটে যাচ্চে —তাদের ছাড়িয়ে যাওয়া চলে না । প্রায় যখন সাড়ে সাতটা, তখন দূরে আলো দেখা গেল। ওরা বললে—ওই চোরামুখ বস্তির আলো । বেশ শীত করচে, বোধ হয় বাদলার হাওয়া আর এই একদম খোলা মাঠের জন্যেই। অগ্রহায়ণের প্রথমে যেমন গীত পড়ে বাংলা দেশে, সেই রকম শীতটা । গরম কাপড় সঙ্গে বিশেষ কিছু আনিনি, মনে হল না-এনে বড় ভুল করেচি। চোরামুখ পৌছে একটা বড় খোলার কুলি-ধাওড়ার মতো ঘরে ওরা আমার ওঠালে। সঙ্গে কোনো আলো নেই—আমার সঙ্গেও না। জায়গাটা নিতান্ত অন্ধকার। জিনিসপত্র নামিয়ে বিশ্রাম করচি, এমন সময় আমার নজরে পড়লে ঘরটার সামনের রাস্তা দিয়ে বাঙালী