পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8\సి ভদ্রলোক ঘাড় নেড়ে বললেন—তা মশায় হয় কি করে। এখানে খেকে কোনো যোগযোগ করা অসম্ভব । -८कन ? —সন্ধান পাই কোথা থেকে বলুন। বাঙালীর মুখই দেখিনে। সেই তো হয়েচে মুশকিল। .কিছুক্ষণ একথা-ওকথার পর ভদ্রলোক বললেন—আপনি কতদিন এদেশে থাকবেন । —কত আর, দিন কুড়ি কি একমাস। —ফিরে গিয়ে দয়া করে যদি একটি মেয়ের সন্ধান করে দেন তবে বড়ই.এই দেখুন বুড়ো মা এক সংসারের সব খাটুনি থাটেন, তারপর ছেলেটির যত্ন করা, তাও তেমন হয় না, সংসারের কতদিক এক দেখবো বলুন। --বেশ, বেশ, আমি ফিরে গিয়ে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো— —আমরা ভট্টাচাজ্যি, রাঢ় শ্রেণী। আগের বিয়ে কোথায় করেছিলুম সে ঠিকানাও আপনাকে দিচ্চি। যারা মেয়ে দেবেন, তারা সন্ধান নিয়ে দেখতে পারেন, বংশে কোনো খুঁত নেই আমাদের। সকালে উঠে আমাকে তিনি গালার কারখানায় নিয়ে গেলেন। বড় বড় মাটির গামলায় বোধহয় গালা ভিজানো আছে, চামড়ার কারখানার মতো ভীষণ দুর্গন্ধ, আর ভারি অপরিষ্কার সমস্ত জায়গাটা। খুব বড় খোলার ঘর, লম্বা ধরনের। যে গুদামটাতে রাত্রে ছিলাম, ঠিক তেমনি ধরনের কুলি-ধাওড়ার মতো সেই ঘরট । বললুম—গালা কোথা থেকে কেনেন ? —জংলী গালা গোড় মেয়ের বিক্ৰী করতে আসে, তাই কিনি। এখানে আরও দুটো কারখানা আছে মাড়োয়ারীদের। —কি রকম আয় হয় কারখানা থেকে, যদি কিছু মনে না করেন ? —মনে করবো কেন বলুন। তা মাসে গড়ে শ-দেড়েক টাকা দাড়ায়, খরচ-খরচা সব পুষিয়ে। তবে আরও বাড়াতুম, কিন্তু কাজে মন লাগচে না মশাই। নিতান্ত খারাপ আর নয়, একজন বাঙালী ভদ্রলোক এতদূরে এসে স্বাধীন ব্যবসা চালাচ্চেন মাড়োয়ারী বণিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, কেরানিগিরি না করে। এতে আনন্দ হবার কথা বটে। আমি তাকে বোঝালুম অনেক, নিরুৎসাহ হওয়ার কারণ নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে, তিনি ব্যবসা যেন না ছাড়েন । সকালে চ খেয়ে ওঁদের কাছে বিদায় নিলুম। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে কিছুদূর পর্যন্ত এলেন। ছতিনবার আমার জিজ্ঞাসা করলেন আমি কলকাতায় ফিরে সব ভুলে যাবো না তো? . বিশেষ করে তার বিষয়টা। আরও বললেন— যাবার সময় এই পথেই তো ফিরবেন, আমার সঙ্গে না দেখা করে যেন যাবেন না। বললুম-নিশ্চয়ই, এ পথে ফিরবার সময় মায়ের হাতের রান্না না খেয়ে কি যাবে। ভেবেচেন ?