পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8wo বিভূতি-রচনাবলী ফেলতুম তিন চারখানা-কখনো বা জোড়া দিয়ে, কখনো আলাদা আলাদা। কতরকমের গল্প হত, চা চড়তে, আমরা চা খেয়ে খুব খানিকটা বিশ্রাম করে ঝরনার জলে নেমে আসতুম—এদিকে, মাদার রান্না চড়িয়েছে, আরও কিছুক্ষণ বসবার পরে মানারু শালপাতায় আমাদের ভোজ্য পরিবেষণ করতো। খেয়ে-দেয়ে ঘণ্টাখানেক সবাই ঘুমিয়ে নিতে, তারপর আবার উদ্যোগ করে তাবু উঠিয়ে সবাই মিলে রওনা হওয়া যেতো। কোন উদ্বেগ নেই,চিন্তানেই মনে—দুর কোনো বৃক্ষচুড়ায় ময়ূরের ডাক,বনের ডালপালার বাতাসের মর্মর শব্দ, ঝরনার কলতান, প্রচুর অবকাশ ও আনন, এ যেন আমরা আবার আমাদের প্রাচীন অরণ্য জীবনে ফিরে গিয়েচি। বিংশ শতাব্দীর কর্মবহুল দিনগুলি থেকে পিছু হেঁটে দায়িত্বহীন মুক্তজীবনের আনন্দে আমাদের মন ভরপুর। তা ছাড়া, এই বিরাট বনপ্রকৃতির নিবিড় সাহচর্যও আমাদের সকলের মনে কেমন একটা নেশা জাগিয়ে তুলেচে। আমাদের মধ্যে একজন বললে, তার কোনো এক বন্ধু আলমোড় থেকে পারে হেঁটে হিমারণ্যের বিচিত্র সৌন্দর্যের মধ্যে ওই পথে গঙ্গোত্রী যমুনোত্রী যাবার জন্তে বেরিয়েছিল, সে আর ফিরে এল না। এখন ওইখানে কোনো জায়গায় থাকে, সাধুসন্ন্যাসীর জীবন যাপন করে। হিমালয়ের নেশা তাকে ঘরছাড়া করেচে। একদিন সন্ধ্যাবেলা আমরা একটি ক্ষুদ্র গোড় বস্তিতে পৌছলুম। আমাদের থাকবার উপযুক্ত ঘর নেই সেখানে, ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর, তাদেরই জায়গা কুলোর না। অবশেষে একটা গোয়াল ঘরে আমাদের জায়গা করে দিলে। কিছুক্ষণ পরে বস্তির লোকজন আমাদের ঘিরে গল্প-গুজব করতে এল । একজন বললে—তোরা ভালুকের ছানা কিনবি ? আমরা দেখতে চাইলুম। তারা দুটি ছোট লোম-বাঁকড়া বিলিতি কুকুরের ছানার মতো জীব নিয়ে এল। মাত্র দুমাস করে তাদের বয়েস, এই বয়সেই বড় কুকুরের মতো গারে শক্তি। ওরা বললে, একটা বাঘের বাচ্চাও ছিল, কিছুদিন আগে ডোঙ্গরগড় থেকে এক সাহেব শিকারী এসেছিল, তার কাছে ওরা সেটা বিক্রী করেচে। আমরা ভালুকের ছানা কিনিনি, বনের মধ্যে কোথায় কি খাওয়াবে, দলের অনেকেই আপত্তি করলে। বন্তিটাতে ঘর-দশেক লোক বাস করে। আমরা বললুম—তোমরা জিনিসপত্র কেনো কোথা থেকে ? ওরা বললে—এখানে আমরা ভূটা আর দেধানার চাষ করি। মুন কিনে আনি শুধু অমর-কন্টকের বাজার থেকে। তীরধচুক আছে, পাখী আর হরিণ শিকার করি। আমরকণ্টকের মেলার সময় হরিণের চামড়া, ভালুকের ছানা, পাখীর পালক ইত্যাদি বিক্ৰী করি স্বাত্রীদের কাছে। তা থেকে কাপড় কিনে আনি। বেশ সহজ ও সরল জীবনধাত্রা। তবে এরা বড় অলস । জীবনধাত্রার অনাড়ম্বর সরলতাই এদের অলস ও শ্রমবিমুখ করে তুলেচে। পয়লা দিতে চাইলেও কোনো প্রমসাধ্য কাজ এর