পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

መ ጭ বিভূতি-রচনাবলী জড়াই ধরে নাই, একোণে ওকোণে লুকাইয়া মিভরা হাসিমুখে উকি মারে নাই বাহা তাহা বলিয়া কথা ঢাকিতে যার নাই! ভাবিয়া কথা বলিতে শিখিয়াছে—এসব সর্বজয়া পছন্দ করে না। অপুর ছেলেমান্থষির জন্ত সর্বজয়ার মন ভূষিত হইয়া থাকে, অপু না বাড়ক, সে সব সময়ে তাহার উপরে একান্ত নির্ভরশীল ছোট খোকাটি হইয়া থাকুক—সর্বজয়া যেন মনে মনে ইহাই চায়। কিন্তু তাহার অপু যে একেবারে বদলাইয়া যাইতেছে।. অপুর উপর মাঝে মাঝে তাহার অত্যন্ত রাগ হয়। সে কি জানে না--তাহার মা কি রকম ছটফট করিতেছে বাড়িতে ! একবারটি কি এতদিনের মধ্যে আসিতে নাই ? ছেলেবেলায় সন্ধ্যার পর এ ঘর হইতে ও-ঘরে যাইতে হইলে মায়ের দরকার হইত, মা খাওয়াইয়া ন দিলে খাওয়া হইত না—এই সেদিনও তো। এখন আর মাকে দরকার হয় না—না 7 বেশ– তাহারও ভাবিবার দায় পড়িয়া গিয়াছে, সে আর ভাবিবে না। বয়স হইয়া আসিল, এখন ইষ্টচিন্তা করিয়া কাল কাটাইবার সময়, ছেলে হইয়া স্বর্গে ধ্বজ তুলিবে কি না! কিন্তু শীঘ্রই সর্বজয়া আবিষ্কার করিল—ছেলের কথা ন! ভাবিয়া সে একদণ্ডও থাকিতে পারে না। এতদিন সে ছেলের কথা প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্তে ভাবিয়া আসিয়াছে। অপুর সহিত অসহযোগ করিলে জীবনটাই যেন ফাক, অর্থহীন, অবলম্বনশূন্ত হইয়া পড়ে—তাহার জীবনে আর কিছুই নাই—এক অপু ছাড়া ! . এক একদিন নির্জন দুপুর বেলা ঘরে বসিয়া হাউ হাউ করিয়া কাদে। সে দিন বৈকালে সে ঘরে বসিয়া কাপাস তুলার বীজ ছাড়াইতেছিল, হঠাৎ সম্মুখের ছোট ঘুলঘুলি জানালার ফাক দিয়া বাড়ির সামনের পথের দিকে তাহার চোখ পড়িল। পথ দিয়া কে যেন যাইতেছে—মাথার চুল ঠিক যেন অপুর মত, ঘন কালো, বড় বড় ঢেউখেলানো, সর্বজয়ার মনটা ছাৎ করিয়া উঠিল। মনে মনে ভবিল-এ অঞ্চলের মধ্যে এ রকম চুল তো কখনও কারও দেখি নি কোনদিন—সেই শত্তরের মত চুল অবিকল! . তাহার মনটা কেমন উদাস অন্তমনস্ক হইয়া যায়, তুলার বীজ ছাড়াইতে আর আগ্রহ থাকে না । হঠাৎ ঘরের দরজায় কে যেন টোকা দিল। তখনি আবার মৃদু টোকা । সর্বজয়ী তাড়াতাড়ি উঠিয়া দোর খুলিয়া ফেলে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করিতে পারে না। অপু দুষ্ট.মি-ভরা হাসিমুখে দাড়াইয়া আছে। নিচু ইয়া প্রণাম করিবার আগেই সর্বজয়ী পাগলের মত ছুটিয়া গিয়া ছেলেকে জড়াইয়া ধরিল। অপু হাসিয়া বলিল—টের পাওনি তুমি, না মা ? আমি ভাবলাম আস্তে আস্তে উঠে দরজায় টোকা দেবো। so সে মাম্জোয়ানের মেলা দেখিতে আসিয়া একবার বাড়িতে না আসিয়া থাকিতে পারে নাই। এত নিকটে আসিয়! মা’র সঙ্গে দেখা হইবে না! পুলিনের নিকট রেলভাড়া ধার লইয়া তবে আসিয়াছে। একটা পুটলি খুলিয়া বলিল, তোমার জন্তে ছচ আর গুলিতে এনেচি– আর এই স্থাখো কেমন কাচ পাপর এনেছি মুগের ডালের—সেই কাশীতে তুমি ভেঙ্গে দিতে ।