পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e/عا কি মনোহর। কোনো অবাস্তর ধানাই পানাই নেই ; এক পদক্ষেপেই রচয়িতা পাঠককে গল্পের সিং-দরজা পার করিয়ে দেন। তারপর তার জন্য আর কাউকে ভাবতে হয় না, ঘটনার প্রবলতাই তাকে চালিয়ে নিয়ে যায়। এই গ্রন্থের দ্বিতীয় উপন্যাসের নাম “মরণের ডঙ্কা বাজে' গল্প শুরু হচ্ছে, "চাদপাল ঘাট থেকে রেজুনগামী মেল স্টিমার ছাড়ছে। বহু লোকজনের ভিড় “’ আর দেখতে হয় না। নায়ক 'স্বরেশ্বরকে কেউ তুলে দিতে আসে নি, কারণ কলকাতায় তার জানাশোনা বিশেষ কেউ নেই। সবে সে চাকরিটা পেয়েছে, একটা বড় ঔষধ-ব্যবসায়ী ফার্মের ক্যানভাসার হয়ে সে যাচ্ছে রেজুন ও সিঙ্গাপুর। অমনি স্বরেশ্বরের ধাত্রার সঙ্গে সঙ্গে গল্পের নৌকো-ও পাল তুলে দিল । কোনো গল্পের-ই কোথাও কৃত্রিমতার একটুকু খাদ নেই। অতি সহজ সরল কথা বলার ভাষা। চরিত্রগুলি যেন জীবন থেকে সন্ত তুলে নেওয়া। ঘটনাচক্রও যেন বড়ই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। বাকি যা-কিছু সে-সব রহস্তের মেঘের আড়াল থেকে পাঠককে বিস্ময়ে বিমোহিত করে । তার-ই মধ্যে রয়েছে গল্পকারের শ্রেষ্ঠ গুণ। সেটি হল এক ধরণের বলিষ্ঠ সততা, ধার জোরে যা অভাবনয়ীয় তাও সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ হয়। প্রায় সর্বদাই মন গড় দেশ কাল না নিয়ে, বিভূতিভূষণ সাম্প্রতিক ওঁ প্রাচীন ইতিহাস, ভূগোল, জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান তথ্য ও বিবরণী নিভুল ভাবে ব্যবহার করেন। র্তার অনুশীলনের বিস্তার দেখে আশ্চর্য হতে হয়। যে জায়গার কথাই লেখেন, সেখানকার খুটিনাটি থাকে তার নখগ্রে। সেখানকার বনজঙ্গলের গাছপালার নাম, বর্ণনা, স্বাদ-গন্ধ কিছু বাকি রাখেন না । এ গল্পে বৰ্মার জাহাজের যাত্রীদের দৈনিক জীবনযাত্রা কারো সত্যিকার দিনপঞ্জিকার মতো শোনায়। সত্যিই লেখাপড়া শেষ করে কার্যব্যপদেশে বিভূতিভূষণ ঐ সব অঞ্চলে ঘুরেছিলেন। অবিপ্তি না ঘুরলেও, যেমন করে সম্ভব তথ্যগুলি নিশ্চয়ই সংগ্রহ না করে ছাড়তেন না । দুঃসাহসিক অভিধানের কাহিনী হলেও, এ গল্পের মেজাজ তার অন্যান্ত কিশোর-পাঠ্য উপন্যাস থেকে আলাদা। চীন-জাপানের যুদ্ধ ও চীনদেশের বিপ্লবের স্বত্রপাতের তথ্য অবলম্বন করে এ বই লেখা হয়েছিল। বড় বেশি বাস্তব-আশ্রয়ী, তথ্য-বহুল, তাই মন বড়ই ক্লিষ্ট হয়। আমাদের পরিচিত বিভূতিভূষণকে যেন এর মধ্যে খুজে পাওয়া দায় হয়। কামানের গোলা, বোমা, বারুদের গন্ধ, আকস্মিক আক্রমণ, শোচনীয় মৃত্যু, নিষ্ঠুর অত্যাচার, এ-সব আদপেই বিভূতিভূষণের মনের-মেজাজ-মতে জিনিস নয়। তবু মনে হয় জীবনের এই রূঢ়, নির্মম, সংহারের দিকটাকে শিশু-সাহিত্যে উপেক্ষা করলেও চলবে না। মানুষ তৈরির এ-ও একটা উপাদান। মানুষের মনে মানবতার প্রতিষ্ঠা হয় শৈশবে কৈশোরে, যে বয়সের ছেলেমেয়েরা এ বই পড়বে। এই পাঁচটি বইয়ের মধ্যে ‘মিসমীদের কবচ’কে সব চাইতে দুর্বল রচনা বলে মনে হয়। ডিটেক্‌টিভ গল্প, কিশোর সাহিত্যে যার জনপ্রিয়তার তুলনা হয় না। কাহিনীর অকুস্থলটি মন্দ নয়। বিভূতিভূষণের প্রিয় বাংলার পাড়াগ। অবিশুি সেখানকার সাধারণ অধিবাসীরা তার হাতে পড়ে একটু অসাধারণত্ব লাভ করেছে। ঘটনাটিও নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার নয়।