পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিস্‌মিদের কবচ
২০১


গ্রামের সঙ্গে সুদুর আসামের যোগ কিভাবে স্থাপিত হতে পারে—এ আমার নিকট একটা মস্ত-বড় সমস্যা। একটা ক্ষীণ সূত্র মিলেচে।

আমি বল্লাম—জানকীবাবু বুঝি আসামে থাকতেন?

—হ্যাঁ দাদা, অনেকদিন ছিল। এখন আর থাকে না। আমার সে মেয়ে মারা গিয়েচে কিনা! তবুও জামাই মাঝে-মাঝে আসে। গাঙ্গুলিমশায়ের সঙ্গে বড় ভাব ছিল। এলেই ওখানে বসে গল্প, চা খাওয়া—

—ও!

—বুড়ো খুন হয়েছে শুনে জামাইয়ের কি দুঃখু!

—গাঙ্গুলিমশায়ের মৃত্যুর ক’দিন পরে এলেন উনি?

—তিন-চার দিন পরে দাদা!

—আপনার মেয়ে মারা গিয়েচেন কতদিন হোলো দিদিমা?

—তা, বছর-তিনেক হোলো—এই শ্রাবণে।

—মেয়ে মারা যাওয়ার পর উনি যেমন আসছিলেন, তেমনই আসতেন, না, মধ্যে কিছুদিন আসা বন্ধ ছিল?

—বছর-দুই আর আসে নি। মন তো খারাপ হয়, বুঝতেই পারো দাদা! তারপর এলো একবার শীতকালে। এখানে রইলো মাসখানেক। বেশ মন লেগে গেল। সেই থেকে প্রায়ই আসে।

আমি বৃদ্ধার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। সেদিন আর কোথাও বেরুলাম না। পরদিন সকালে উঠে স্থির করলাম একবার থানায় দারোগাবাবুর সঙ্গে দেখা করা দরকার। বিশেষ আবশ্যক।

পথেই জানকীবাবুর সঙ্গে দেখা। আমায় জিগ্যেস করলেন—এই যে! বেড়াচ্ছেন বুঝি?

আমি বল্লাম—চলুন, ঘুরে আসা যাক একটু। আপত্তি আছে?

—হ্যাঁ হ্যাঁ, চলুন না যাই।

—আচ্ছা জানকীবাবু, আপনি মন্ত্রতন্ত্রে বিশ্বাস করেন?

—হ্যাঁ, খানিকটা করিও বটে, খানিকটা না-ও বটে। কেন বলুন তো?

—আমার নিজের ওতে একেবারে বিশ্বাস নেই। তাই বলচি। আপনি তো অনেক দেশ ঘুরেচেন, আপনার অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে বেশি।

হঠাৎ জানকীবাবু আমার চোখের সামনে এমন একটা কাণ্ড করলেন, যাতে আমি স্তম্ভিত ও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণের জন্যে।