পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
বিভূতি-রচনাবলী

—দেমাক দেখলেন কোথায়? আপনি তো কোনো কারণ দেখান নি। শুধুই ব’লে যাচ্ছেন—কবচ ফেলে দাও। আজকালকার কোনো দেশে এসব মন্ত্রে-তন্ত্রে বিশ্বাস করে ভেবেচেন? একখানা কাঠের পাত মানুষের অনিষ্ট করতে পারে ব’লে, আপনিও বিশ্বাস করেন?

—আমিও আগে ঠিক এই কথাই ভাবতাম, কিন্তু এখন আমি বুঝেছি। কিন্তু বুঝেছি এমন সময় যে, যখন আর কোনো চারা নেই।

—জিনিসটা কি, খুলে বলুন না দয়া ক’রে!

—শুনবেন তবে? ওই কবচই আমার এই সর্ব্বনাশের কারণ।

আমি বুঝেছিলাম এ-সম্বন্ধে জানকীবাবু কি একটা কথা আমার কাছে চেপে যাচ্ছেন। আগে একবার বলতে গিয়েও বলেন নি, হঠাৎ গুম্‌ খেয়ে চুপ ক’রে গিয়ে অন্য কথা পেড়েছিলেন। এবার হয়তো তার পুনরাবৃত্তি করবেন।

সুতরাং, আমি যেন তাঁর আসল কথার অর্থ বুঝতে পারি নি এমন ভাব দেখিয়ে বল্লাম—তা বটে। একদিক থেকে দেখতে হোলে, ওই কবচখানাই তো আপনার বর্ত্তমান অবস্থার জন্যে দায়ী!

জানকীবাবু আমার দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে চেয়ে বল্লেন—আপনি কি বুঝেছেন, বলুন তো? কিভাবে দায়ী?

—মানে, ওখানা না হারিয়ে গেলে তো আপনি আজ ধরা পড়তেন না—যদি ওখানা পকেট থেকে না প’ড়ে যেতো?

—কিছুই বোঝেন নি।

—এ-ছাড়া আর কি বুঝবার আছে?

—আজ যে আমি একজন খুনী, তাও জানবেন ওই সর্ব্বনেশে কবচের জন্যে। কবচ যদি আমার কাছে না থাকতো তবে আজ আমি একজন মার্চ্চেণ্ট—হতে পারে ব্যবসাতে লোকসান দিয়েছিলাম—কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে লাভ-লোকসান কার না হয়? আমার বুকে সাহস ছিল, লোকসান আমি লাভে দাঁড় করাতে পারতাম। কিন্তু ওই কবচ তা আমায় করতে দেয় নি। ওই কবচ আমার ইহকাল পরকাল নষ্ট করেচে!

জানকীবাবুর মুখের দিকে চেয়ে বুঝলাম, গল্প বলবার আসন্ন নেশায় তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেচেন। চুপ ক’রে জিজ্ঞাসু-দৃষ্টিতে তাঁর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম।

জানকীবাবু বল্লেন—আজ প্রায় পঁচিশ বছর আমি সদিয়া-অঞ্চলে ব্যবসা করচি। পরশুরামপুর-তীর্থের নাম শুনেছেন?

—খুব।

—ঘন জঙ্গলের পাশে ওই তীর্থটা পড়ে। ওখান থেকে আরও সত্তর মাইল দূরে ভীষণ দুৰ্গম বনের মধ্যে আমি জঙ্গল ইজারা নিয়ে পাটের ব্যবসা শুরু করি। ওখানে দফ্‌লা, মিরি, মিস্‌মি এইসব নামের পার্বত্য-জাতির বাস। একদিন একটা বনের মধ্যে কুলিদের নিয়ে