পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ye বিভূতি-রচনাবলী শোনা গেল—কিন্তু দূরে। যেন এই নির্জন প্রাস্তরের অধিষ্ঠাত্রী কোনো রহস্যময়ী রাক্ষসীর বিকট চীৎকার। মাসাই কুলীটা বললে—সিংহ দেহ নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ওকে নিয়ে আমাদের ভুগতে হবে। আরও অনেকগুলো মাহুষ ও ঘাল না করে ছাড়বে না। সবাই সাবধান। যে সিংহ একবার মানুষ খেতে শুরু করে, সে অত্যন্ত ধূৰ্ত্ত হয়ে ওঠে। রাস্ত যখন তিনটে, তখন সবাই ফিরল তাবুতে। বেশ ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় সারা মাঠ আলে। হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার এই অংশে পার্থী বড় একটা দেখা যায় না দিনমানে, কিন্তু এক ধরনের রাত্রিচর পার্থীর ডাক শুনতে পাওয়া যায় রাত্রে—সে স্বর অপার্থিব ধরনের মিষ্ট । এইমাত্র সেই পাখী কোন গাছের মাথায় বহুদূরে ডেকে উঠল। মনটা এক মুহূর্তে উদাস করে দেয়। শঙ্কর ঘুমুতে গেল না। আর সবাই তাবুর মধ্যে শুতে গেল—কারণ পরিশ্রম কারে কম হয় নি । তাবুর সামনে কাঠকুটো জালিয়ে প্রকাণ্ড অগ্নিকুণ্ড করা গেল। শঙ্কর সাহস করে বাইরে বসতে অবিশুি পারলে না—এরকম দুঃসাহসের কোনো অর্থ হয় না। তবে সে নিজের খড়ের ঘরে শুয়ে জানাল দিয়ে বিস্তৃত জ্যোৎস্নালোকিত অজানা প্রাস্তরের দিকে চেয়ে রইল । মনে কি এক অদ্ভুত ভাব ! তিরুমলের অদৃষ্টলিপি এই জন্যেই বোধ হয় তাকে আফ্রিকায় টেনে এনেছিল। তাকেই বা কি জন্যে এখানে এনেছে তার অদৃষ্ট, কে জানে তার খবর? আফ্রিকা অদ্ভূত সুন্দর দেথতে—কিন্তু আফ্রিকা ভয়ঙ্কর ! দেখতে বাবলা বনে ভত্তি বাংলাদেশের মাঠের মত দেখালে কি হবে, আফ্রিকা অজানা মৃত্যুসন্ধুল ! যেখানে সেখানে অতর্কিত নিষ্ঠুর মৃত্যুর ফাদ পাতা-পরমুহূৰ্ত্তে কি ঘটবে, এ মুহূৰ্বে তা কেউ বলতে পারে না। আফ্রিকা প্রথম বলি গ্রহণ করেছে—তরুণ হিন্দুযুবক তিরুমলকে। সে বলি চায় । তিরুমল তো গেল, সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পে পরদিন থেকে এমন অবস্থা হয়ে উঠল যে আর সেখানে সিংহের উপদ্রবে থাকা যায় না । মাতুষ-থেকে সিংহ অতি ভয়ানক জানোয়ার ! যেমন সে ধূৰ্ত্ত তেমনি সাহসী। সন্ধ্যা তো দূরের কথা, দিনমানেই এক বেশিদূর যাওয়া যায় না সন্ধ্যার আগে তাবুর মাঠে নানা জায়গায় বড় বড় আগুনের কুণ্ড করা হয়, কুলীর আগুনের কাছ ঘে যে বসে গল্প করে, রান্না করে, সেখানে বসেই খাওয়া-দাওয়া করে। এঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্দুক হাতে রাত্রে তিন-চার বার তাবুর চারিদিকে ঘুরে পাহারা দেন, ফাক দ্যাওড় করেন—এত সতর্কতার মধ্যেও একটা কুলীকে সিংহ নিয়ে পালালে৷ তিরুমলকে মারবার ঠিক দুদিন পরে সন্ধ্যারাত্রে । তার পরদিন একটা সোমালী কুলী দুপুরে তাবু থেকে তিনশো গজের মধ্যে পাথরের ঢিবিতে পাথর ভাঙতে গেল—সন্ধ্যায় সে আর ফিরে এল না। সেই রাত্রেই, রাত দশটার পরে, শঙ্কর ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের তাবু থেকে ফিরছে, লোকজন কেউ বড় একটা বাইরে নেই, সকাল সকাল যে যার ঘরে শুয়ে পড়েছে, কেবল এখানে ওখানে