পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী ২২৩ ভয়ের। ভাঙা মন্দির দেখিয়া মনে ভয় কেন হইল একথা তারপর বাড়ী ফিরিয়া অবাক হইয়} ভাবিয়াছি। তবুও অগ্রসর হইয়া যাইতেছিলাম মন্দিরটা ভালো করিয়া দেখিতে, একজন ছাত্র বাধা দিয়া বলিল, “যাবেন না তার ওদিকে...” "কেন ?” *জায়গাটা ভালো না । সাপের তয় আছে সন্ধোবেলা । তা ছাড়া লোকে বলে অনেক রকম ভয়ভীত আছে—মানে অমঙ্গলের ভয় । কেউ ওদিকে বায় না।” “ওটা কি মন্দির ?” *ওটা রঙ্কিণীদেবীর মন্দির, স্যার । কিন্তু আমাদের গায়ের বুড়ো লোকেরাও কোনোদিন ওখানে পূজো হ’তে দেখৈ নি—মূৰ্ত্তিও নেই বহুকাল। ওইরকম জঙ্গল হয়ে পড়ে আছে আমাদের বাপ-ঠাকুরদাদার আমলেরও আগে থেকে।“চলুন স্তার নামি।” ছেলে দুটা যেন একটু বেশি তাড়াতাড়ি করিতে লাগিল নামিবার জন্য । রঙ্কিণীদেবী বা তাহার মন্দির সম্বন্ধে দু-একজন বৃদ্ধ লোককে ইহার পর প্রশ্নও করিয়াছিলাম —কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় লক্ষ্য করিয়াছি, তাহার কথাটা এড়াইয়৷ ঘাইতে চায় যেন, আমার মনে হইয়াছে রক্ষিণী দেবী সংক্রান্ত কথাবার্তা বলিতেও তাহারা ভয় পায়। আমিও আর সে-বিষয়ে কাহাকেও কিছু জিজ্ঞাসা করা ছাড়িয়া দিলাম। বছর খানেক কাটিয়া গেল । স্কুলে ছেলে কম, কাজকৰ্ম্ম খুব হাল্কা, অবসর-সময়ে এ-গ্রামে ও-গ্রামে বেড়াইয়া এ অঞ্চলের প্রাচীন পট, পুথি, ঘট ইত্যাদি সংগ্ৰহ করিতে লাগিলাম। এ বাতিক আমার অনেকদিন হইতেই আছে। নূতন জায়গায় আসিয়া বাতিকটা বাড়িয়া গেল। চেরো গ্রাম হইতে মাইল পাঁচ-ছয় দূরে জয়চণ্ডী পাহাড়। এখানে খাড়া উচু একটা অদ্ভূত গঠনের পাহাড়ের মাথায় জয়চণ্ডী ঠাকুরের মন্দির আছে। পৌষ মাসে বড় মেলা বসে। বি-এলআর লাইনের একটা ছোট স্টেশনও আছে এখানে । এই পাহাড়ের কাছে একটি ক্ষুত্র বস্তিতে কয়েক ঘর মানভূমপ্রবাসী উড়িয়া ব্রাহ্মণের বাস। ইহাদের মধ্যে চন্দ্রমোহন পাও নামে একজন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের সঙ্গে আমার খুব আলাপ হইয়া গেল --তিনি বাকা বাকী মানভূমের বাংলায় আমার সঙ্গে অনেক রকমের গল্প করিতেন। পট, পুথি, ঘট সংগ্রহের অবকাশে আমি জয়চণ্ডীতলা গ্রামে চন্দ্রমোহন পাণ্ডার নিকট বসিয়া তাহার মুখে এদেশের কথা শুনিতাম। চঞ্জ পাও! আবার স্থানীয় ডাকঘরের পোস্টমাস্টারও । এদেশে প্রচলিত কত রকম আজগুবি ধরনের সাপের, ভূতের, ডাকাতের ও বাঘের (বিশেষ করিয়া বাঘের—কারণ বাঘের উপস্রব এখানে খুব বেশি) গল্প ৰে বৃদ্ধ চন্দ্ৰ পাণ্ডার মুখে শুনিয়াছি এবং এই সব গল্প শুনিবার লোভে কত আষাঢ়ের ঘন বর্ষার দিনে বৃদ্ধ পোস্টমাস্টারের বাড়ীতে গিয়া ষে হানা দিয়াছি, তাহার হিসাব দিতে পারিব না । মানভূমের এই সব আরণ্য অঞ্চল সভ্যজগতের কেন্দ্র হইতে দূরে অবস্থিত, এখানকার জীবনযাত্রাও একটু স্বতন্ত্র ধরনের। যতই অভূত ধরনের গল্প হউক, জয়চওঁী পাহাড়ের ছায়ায়