পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী २8¢ আমি বললুম, “হরিদাস মজুমদার•••• “না—না, পাঁচকড়ি মজুমদার, বাবার নাম হরিদাস মজুমদার- আমার দিদির নাম কি ? শ্বশুরবাড়ী কোন গায়ে }•••• “ক্ষাস্তমণি। খগুরবাড়ী হ’ল—শ্বশুরবাড়ী--" *আপনি সব মাটি করলেন দেখচি ! সামস্তপুর-তেওটা, বলুন--” “সামন্তপুর-তেওট—শ্বশুরের নাম রামধন্থ দাস—দুল্প ভরাম দাস---” অবশেষে মিনিট দশ-বারোর মধ্যে আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে এসেচে । বৌটি বললে, “রান্না-খাওয়া করে নিন ঠাকুরমশায়, কোন ভয় করবেন না। আমার বাপের বাড়ীর নাম-ধাম যখন,জানা হয়ে গেছে, তখন আপনাকে বাচাতে পেরেচি। এখন শুকুল,— খাওয়া-দাওয়ার পরেই শ্বশুরমশায়ের কাছে আমার বাপের বাড়ীর পরিচয় দিয়ে বলবেন— আপনি তাদের গুরুবংশ, আমার নাম বলে জিগ্যেস করবেন—আমার বিয়ে হয়েচে কোথায়, জানো নাকি ? গলা যেন না কঁপে, কোনরকম সন্দেহ যেন না হয়•••আমি চললুম, আবার আসবে। আপনি শ্বশুরকে বলবার পরে ; কিন্তু দেরি করবেন না বেশি, বিপদ কখন হয় বলা তো যায় না । রান্না-খাওয়া শেষ না করলেও তো সন্দেহ করতে পারে । রান্না-খাওয়া করতেই হ’ল । রাত্রের অন্ধকার তখন বেশ ঘন হয়ে এসেচে, রাত আন্দাজ দশটার কম নয়, আহারাদির পর নিজের কুঠুরিতে বসেচি, আর আমার মনে হচ্ছে এ বাড়ীর সবাই যেন খাড়ায়, রাম-দাতে শান দিচ্ছে, আমার গলাটি কাটবার জন্তে । এই সময় গৃহস্বামী স্বয়ং আমার জন্তে পান নিয়ে এলো । বললে, “কি ঠাকুরমশায়, আহারাদি হ’ল ? এখন দিব্যি করে শুয়ে পড়ুন । মশারীটা টাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছি ; রাত হয়েচে আর দেরি করবেন না •••” আমি বললুম, “হ্যা, একটা কথা বলি---আমাদের এক মন্ত্রশিস্য, বাড়ী কুসুমপুর, থান৷ রায়না, নাম পাচকড়ি—ইয়ে, হরিদাস মজুমদার, তার একটি মেয়ের নাম বামা-এ দিকেই কোথায় বিয়ে হয়েচে । তারাও জাতে তোমাদের বারুই কিনা—তাই হয়তো চিনলেও চিনতে পারে। মেয়েটির জ্যাঠা দুল্লভরাম—ইয়ে পাঁচকড়ি—আমায় বলে দিয়েছিল মেয়েটির শ্বশুরবাড়ী খোজ করে একবার সেখানে যেতে•••তা যখন এলুমই এ দেশে•••• আমার কথা শুনে বৃদ্ধ যেন কেমন হয়ে গেল, আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে বললে, “কুস্কমপুরের হরিদাস মজুমদার ? বামা ?•••আপনি তাদের চিনলেন কি করে ?” বামার কথা স্মরণ করে গলা না কঁাপিয়ে দৃঢ়স্বরে বললুম, “আমি ষে তাদের গুরুবংশ– আমার বাবার ওরা মন্ত্রশিন্য কিনা ?” বৃদ্ধ তাড়াতাড়ি বললে, “বস্কন, আমি আগচি•••• আমি একটা কুঠরির মধ্যে বসে রইলুম, সন্দেহ ও ভয় তখনও কিছু যায় নি। আর এর ষে গুরুদেবকেই রেহাই দেবে তা কে বলেচে ?