পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९¢२ বিভূতি-রচনাবলী সঙ্গে সঙ্গে কালো আলকাতরার মতো কি একটা দুৰ্গন্ধ পদার্থ মেঝেময় ছত্রাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়লো । নিড়াইয়ের মা অবাক, স্বামী পাগল হয়ে গেল নাকি পয়সার দুর্ভাবনায় এতদিন পরে ? "রাতদুপুরে কিসের একটা কলসী কোথা থেকে উঠিয়ে এনে কি কাও বাধালে দেখো তো ?” বামাচরণ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এত কষ্ট তবে সব বৃথা ! রুপোর গুড়োও এতটুকু নেই কলগীটাতে। কোথায় এক কলসী টাকা বা মোহর—আর তার বদলে— এগুলো কি কালো কালে ? অদৃষ্ট একেই বলে । সারারাত্রি বামাচরণের ঘুম হ’ল না। সত্যিই তার অদৃষ্ট ভালো, নয়। এমন জায়গায় পোত কলসী পেয়েও তার মধ্যে থেকে বেরোয় কালো আলকাতরা ! না হ’লে বম্পাশ সাহেবের দেওয়া এমন চাকরি সে ছেড়ে দিয়ে আসে ? পেয়ে হারানোই তার অদৃষ্ট । পরদিন সকালে লোকজনকে আলকাতরার মতো জিনিসটা দেখাতে কেউ কিছু বলতে পারে না। অবশেষে মামুদপুরের বাজারের বুড়ো কবিরাজমশায় দেখে বললেন, “এ পুরনো ধি। বহুকালের পুরনো ঘি । কতটা আছে ? এর দাম খুব। বিক্রি করবে ? কলকাতায় বৌবাজারের সেনেদের দোকানে পেলেই নেবে।” বুড়ে কবিরাজকে সঙ্গে নিয়ে বামাচরণ কলকাতায় এলো । বৌবাজারের সেনেদের মস্ত কবিরাজী দোকান, সারা ভারতবর্ষ কেন, পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কারবার। ঘি দেখে তারা বললে, “হ্যা, জিনিসটা খুবই ভালো, অস্তত: দুশো বছরের পুরোনে । তোমাদের ঘরে ছিল ?” বামাচরণ সংক্ষেপে কলসী-প্রাপ্তির কথা বর্ণনা করলে। তারপর দরদপ্তর চললো, ওরা সাত টাকার বেশী দর দিতে রাজী নয়, তারপর উঠলো দশ টাকায়, তার বেশী কিছুতেই নয়। বুড়ো কবিরাজকে সঙ্গে না আনলে কিন্তু বামাচরণ দু’টাকা সেরেই জিনিসটা দিয়ে ফেলতে । একজন হিন্দুস্থানী ভদ্রলোক অনেকক্ষণ থেকে ওদের কথাবার্তা শুনছিলেন ; তিনি উঠে এসে বুড়ো কবিরাজকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি খয়রাগড়ের রাজার ম্যানেজার। আমি আপনাদের কথাবার্তা এতক্ষণ শুনছিলাম—রজার মায়ের বয়স হয়েচে, ইপিকাশের অস্থখ। এই পুরোনো ঘি কিনতেই আমি এদের দোকানে এসেছিলাম। এত বছরের পুরানো খি কলকাতায় কোন দোকানে নেই। আমি আপনাদের জিনিস নেবো একশো টাকা করে সেরের দাম দেবো আমি । ওজন করুন মাল।” এ কলসীতে মোট সাড়ে বারো সের ঘি ছিল । কিন্তু আদত কলগীটাতে বোধ হয় আরও বেশী ছিল, কিন্তু সেটা ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। বাকিটা ওরা নতুন কলগীতে পুরে এনেছিল। ঘি বিক্রি করে মোট পাওয়া গেল সাড়ে বারশো টাকা । ৰছ চক্কোত্তি জ্যোতিষী ছিল বড়, সে মিথ্যে বলে নি—এখন তো বামাচরণের অনন্তকাল পড়ে রয়েচে । রাজা হওয়ার আশ্চৰ্য্যটা কি ?