পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&Qbr বিভূতি-রচনাবলী তখন আমার অবস্থা সঙিন হয়ে উঠেচে । কোথাও কিছু ধরবার নেই -প্লেটের মতে মস্বণ পাথরখানার কোন জায়গায় । আমি চিৎ হয়ে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় তার ওপর শুয়ে আছি এবং আঙ্গুল টিপে বা সামান্ত কিছু ধরে আছি, সেটা ছেড়ে দিলেই নিচের দিকে গড়িয়ে পাথরের মুড়ির ভূপের ওপর গিয়ে পড়বো। সে পাথরের স্তৃপ অন্ততঃ ত্রিশ ফুট নিচে, তার ওপড় পড়লে তীক্ষ্ণ ধারালো অসমান প্রস্তরখণ্ডে বিষম আহত হতে হবে। তারপর হাত-পা ভেঙে পড়ে থাকলে এ জনশূন্ত পাহাড়ের ওপরে কে-ই-বা উদ্ধার করচে । এ অবস্থায় মৃত্যু ঘটা বিচিত্র কি ? যখন আমি বুঝলুম আমি খুব বিপদগ্রস্ত—তখন হাত-পায়ে যেন আর বল নেই। আঙুলে টিপে ধরব কি, আঙ্গুলই অবশ হয়ে আসচে। এভাবে আর কিছুক্ষণ কাটলেই গড়িয়ে নিচে পড়ে যাবে এবং সাংঘাতিক আহত হ’ব।--তখন মনে হ’ল ওঠবার সময় পাথরখানার এ অংশ দিয়ে উঠি নি, কোণ ঘেষে উঠেছিলাম। সেখানে নিচে ছোটবড় অসমান শিলাখণ্ডের ধাপমতো ছিল, তখন দিনের আলো ছিল বলে দেখে শুনে ওঠবার স্থবিধা ছিল, এখন রাত্রে বিশেষ করে ওপরের দিক থেকে নামবার সময় অতটা বুঝতে পারি নি । উদভ্ৰাস্তের মতে চারিদিকে চাইলাম, জলে ডোবার পূর্ব মুহূর্তে মজ্জমান ব্যক্তি যেমন কোন আশ্রয় খোজে, তেমনি। হঠাৎ নজরে পড়লো হাত খানেক দূরে একটা অৰ্জুন গাছের মোট শেকড় ওপরের একথানা শিলাখণ্ডের ফাটল থেকে বার হয়ে ঝুলচে । মীয়ার মতো সাহসে বোক দিয়ে দাড়িয়ে উঠে সেই শেকড়টি অঁাকড়ে ধরতে গেলাম এবং ধরেও ফেললাম। এতে নিজেকে আরও বিপন্ন করেছিলাম—কারণ শেকড় হাতের নাগালে না এলে টাল খেয়ে পড়ে গিয়ে সজোরে নিচের প্রস্তররাশির উপর পড়ে চূর্ণ হয়ে যেতাম—ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়লে হয় তো চোট খেয়ে বেঁচে যেতাম, এতে কিন্তু বাচবার সম্ভাবনা আদেী ছিল না। "রাগ থেকে শেকড় ধরে নেমে এসে সৰ্ব্বাঙ্গ দিয়ে যেন ঝাল বেরুচ্ছে বলে মনে হ’ল !-- নিশ্চিন্ত দুর্ঘটনার হাত থেকে পরিত্রাণ পেলে যেমন হয় মামুষের । কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম করে নিয়ে হাত-পায়ের অবশ ভাবটা কাটিয়ে আবার নামতে আরম্ভ করলাম এবং পনরো মিনিটের মধ্যেই ধনারির উপত্যকার সমতল ভূমিতে পা দিলাম। তখন আমার মনে সাহস বেড়ে গিয়েচে । গুরুতর দুর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সমতল ভূমিতে কোন বিপদই আর আমার কাছে বিপদ নয়। তখন রাত আন্দাজ দশটা হবে মনে হ’ল। জ্যোৎস্না খুব ফুটেচে, বনের মধ্যে আগের মতো অত অন্ধকার নেই। প্রথমে সেই পাৰ্ব্বত্য নদীর ধারে এসে পৌঁছলাম তার জলের কলধ্বনি শুনে। জল পান করে ও মাথায় মুখে জল দিয়ে শরীর ও মন স্বস্থ হ’ল। মনে তখন তয় বা উদ্বেগ আদৌ নেই। স্বতরাং ধীর মস্তিষ্ক নিয়ে খুজতে খুঁজতে সেই স্কড়িপথটা প্রায় আধঘণ্টা পরে বার করলাম। কুলামাড়ে যখন এসে পৌঁছেচি তখন রাত বারোটার কম নয়। গ্রাম নিযুতি হয়ে গেছে বন্ধক্ষণ ; আমায় দেখে গ্রাম্য কুকুরের দল মহা ঘেউঘেউ শুরু করলে। একটা ঘরের দাওয়ায় লোকেরা শুয়েছিল, কুকুরের ডাক শুনে তারা জাগলো। আমার দেখে তারা খুব আশ্চৰ্য্য