পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী . وان واج কাউকে সে সব কথা বলেন নি—সবাই ভাবে তিনি একজন গৃহহীন পথিক—হয়তো তার কেউ কোথাও নেই। এতে সবারই স্নেহ তার ওপর আরও বেড়ে যায়, কিসে তিনি মুখে থাকবেন কিলে আত্মীয়হীন নিঃসঙ্গ প্রবাসকষ্ট তার কমবে—সবারই এ চেষ্টা । তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে, এমন মুন্দর চেহারার ছেলে, নিশ্চয়ই কোন বড় ঘরের হবে । গ্রামের যিনি মণ্ডল, র্তার এক মেয়ে পরমান্বন্দরী—সবাই বলে ওই ছেলেই এ মেয়ের উপযুক্ত পাত্র। বিধাতা ওর জন্তেই যেন এ দেবতার মতে সোঁমাকান্তি ছেলেটিকে কোথা থেকে জুটিয়ে এনেচেন। মণ্ডলগুহিণীও রাজকুমারকে একদিন দূর থেকে দেখে এত পছন্দ করলেন যে, তিনি স্বামীকে জানিয়ে দিলেন—যদি ঐ ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হয় ভালোই—নইলে মেয়ে চিরকুমারী থাকুক, তার আপত্তি নেই। & রাজকুমার কিন্তু কিছুতেই তেমন আমোদ পান না। তার মনে কি একটা বিপদের ছায়া সকল আনন্দকে স্নান করে রাখে । একবার ভাবেন হয়তো বাপ-মাকে অনেকদিন দেখেন নি বলে এমন হয়—কিন্তু তার মন বলে তা নয়, তা নয়,—ওসব সামান্ত স্থখ-দুঃখের ব্যাপারএ নয়—এ এমন একটা কিছু, যার কারণ আরও গভীর, জীবন-মরণ নিয়ে এর কারবার। ক্রমে এলো সে মাসের কৃষ্ণপক্ষ। রাজকুমার অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন বাড়ীতে সবারই চোখে জল—গ্রামমৃদ্ধ লোক সকলে বিধ4, নিরানন্দ । কিন্তু কেউ কোনো কথা বলে না, কারণ জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর পাওয়া ধায় না। সবাই কিসের ভয়ে জুজু হয়ে আছে যেন। অবশেষে রাজকুমার কথাটা শুনলেন। এখান থেকে এক যোজন দূরে গৃধ্ৰুকুট পাহাড়ের ওপর রাজগুরু এক কাপালিকের সাধন-পীঠ । প্রতি অমাবস্তায় সেখানে নরবলির জন্য প্রতি গ্রাম থেকে পালাক্রমে একটি তরুণ বয়স্ক লোক পাঠানে৷ চাহ-ই । রাজার হুকুম। এবার এ গ্রামের পাল ৷ শোনা মাত্র রাজকুমার কর্তব্য স্থির করে ফেললেন। তার পিতৃদত্ত তুণের তীক্ষ ইস্পাতের ফলা-পরানো যে বাণ তা কি শুধু নিরীহ পশুপক্ষী শিকারের জন্যে ? “ক্ষতি হতে ত্রাণ করে এই সে কারণ—মহান ক্ষত্রিয় নাম বিদিত জগতে৷”— অস্ত্রগুরুর সে উপদেশ রাজকুমার কি ভুলে গিয়েচেন এত শীগগির ! অমাবস্তার দিন মণ্ডলের বাড়ীতে পাশার সাহাধ্যে নিৰ্দ্ধারিত হবে এবার কে গ্রাম থেকে স্বাবে । রাজকুমার এ কথা শুনলেন । অমাবস্তার পূর্বদিন গভীর রাত্রের অন্ধকারে তিনি চুপি চুপি শয্যাত্যাগ করে কোথায় চলে গেলেন—কেউ জানে না। সকালে উঠে তাকে জার কেউ দেখতে পেলে না। মণ্ডলের বাড়ীতে পাশার মজলিসে যার নাম উঠল সে এক গৃহস্থের একমাত্র পুত্র। সবাই চোখের জলে ভেসে তাকে বিদায় দ্বিলে । তার বৃদ্ধ পিতা ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চললো কাপালিকের কাছে—যদি হাতে-পায়ে ধরে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে পারে এই চুরাশায় । গৃধ্ৰুকুট পৰ্ব্বতের পাদদেশে গিয়ে তারা বা দেখলে, তাতে তার অপ্রত্যাশিত বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল। বড় জামগাছটার তলায় ঘটে। মৃতদেহ ঃ একটা তাদের গ্রামের সেই