পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরামানিক জ্বলে ३४१ রাখে নি—এ একটা পুরুষ মানুষ বটে—কত বিপদে পড়েছে, কত বিপদ থেকে উদ্ধার एग्र८छ् ! বিপদের নামে ত্রিশ হাত পেছিয়ে থাকে ধারা, গ। বঁচিয়ে চলবার বোক যাদের সারা জীকা ধরে, তাদের দ্বারা না ঘুচবে অপরের দুঃখ, না ঘুচবে তাদের নিজেদের দুঃখ ৷ লক্ষ্মী ধান না কাপুরুষের কাছে, অলসের কাছে—তাদের তিনি কৃপা করেন যারা বিপদকে, বিলাসকে, আরামপ্রিয়তাকে তুচ্ছ বোধ করে । জাহাজ সৌরাবায়া এসে পৌছুবার সঙ্গে সঙ্গে ওদের দু-জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল! সত্যিই ক্লাস্তিতে, অনিদ্রায়, দুশ্চিন্তায়, অখাদ্য ভক্ষণে ওদের শরীর ভেঙে পড়েছিল ৷ দিন পনেরো হাসপাতালে শুয়ে থাকবার পরে ক্রমশ ওর শরীর ভাল হয়ে গেল—কাপ্তেনের মস্তিক বিরুতির লক্ষণও ক্রমে দূর হল। ওদের জন্যে কিছু টাকা চাদ উঠেছিল, ও হাসপাতাল থেকে যেদিন বাইরে পা দিলে, সে দিন এক দয়াবতী মেমসাহেব ওকে টাকাটা দিয়ে গেলেন । দুঃস্থ নাগরিকদের থাকবার জন্তে গভৰ্মেন্টের একটা বাড়ী আছে—সেখানে ওকে বিনি খরচায় থাকবার অনুমতি দেওয়া श्ल । এই বাড়ীতে সে প্রায় ফু-মাস ছিল, তারপর অন্য জাহাজে চাকরি নিয়ে ওখান থেকে চলে আসে । তারপর পাঁচ-সাত বছর কেটে গেল। ও যেমন জাহাজে কাজ করে তেমনি করে যাচ্ছে। প্রাচ্য-দেশের বড় বড় বন্দরের মদের দোকান ও জুয়ার আডডার সঙ্গে তখন সে স্বপরিচিত । একবার তাদের জাহাজ ম্যানিলাতে থেমেছে। ও অন্যান্ত লস্করদের সঙ্গে গিয়ে এক পরিচিত জুয়ার আডডায় উঠেছে—এমন সময়ে আড়াধারী এসে ওকে বললে—একবার এল তো! তোমাদের দেশের একজন লোক তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায় । ও অবাক হয়ে বললে—আমাদের দেশের ? আড়াধারী চীনামান হেসে বললে—হঁ্য, ইণ্ডিয়ার। এতকাল দোকান করছি বন্দরে, ইণ্ডিয়ার মান্থব চিনিনে ? @ ও আড্ডাধারীর পিছু পিছু গিয়ে দেখলে জুয়ার আড্ডার পেছনে একটা পায়রার খোপের মত ছোট ভীষণ নোংরা ঘরে একজন লোক গুয়ে। লোকটার বয়স কত ঠিক বোঝবার জে৷ নেই—চল্লিশও হতে পারে, আবার ষাটও হতে পারে । বিছানার সঙ্গে যেন সে মিশে গিয়েছে বহুদিন ধরে অম্বখে ভুগে । 尊 ওকে দেখে লোকটা ক্ষীণ কণ্ঠে তেলেগু ভাষায় বললে—দেশের লোককে দেখতে পাইনে। যখন হংকং হাসপাতালে ছিলাম, অনেক দেশের লোক দেখতাম সেখানে বসে। এখানে । আহ, ভারতের লোক তুমি ? মুসলমান ? তা কী ? এতদূর বিদেশে তুমি শুধু ভারতের লোক, ষে দেশের মাটিতে আমার জন্ম, সেই একই দেশের মাটিতে তোমারও জন্ম। এখানে তুমি আমার ভাই।