পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরামানিক জ্বলে ৩২৫ সে যখন সকলকে গিয়ে খবর দিল তখন সন্ধ্যার অন্ধকার সমগ্র বনভূমিকে আচ্ছন্ন করেছে। ইতিমধ্যেই ওরাং-ওটাং ও শৃগালের ডাক শোনা যাচ্ছে । দু-একটা নিশাচর পাখি ছাড়া অন্ত পাখির কুজন থেমে গিয়েছে। ডালপালার ফাকে উৰ্দ্ধে কৃষ্ণ আকাশে নক্ষত্রাদি দেখা দিয়েছে। ইয়ার হোসেন বারণ করলে—এখন না, এ রাত্রিকালে তাবু ছেড়ে কোথাও খেও না, কাল সকালে দেখা যাবে। সুশীলের আনা পাখি দিয়ে তাবুতে ভোজ হল রাত্রে। জামাতুল্লা বললে—পাচিল যখন বেরিয়েছে—তখন আমায় মিথ্যেবাদী বলে বদনাম আর কেউ দিতে পারবে না। • পরদিন সকলে গিয়ে দেখলে, সত্যই বিরাট প্রাচীর ও পরিখার অস্তিত্ব ওদের সেখানে কোন প্রাচীন নগরীর অস্তিত্বের নিদর্শনস্বরূপ বিরাজমান। পরিখার জলে পদ্মফুল দেখে স্বশীল ও সনৎ ভাবলে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতীক যেন ঐ ফুল। আট শো বছর আগে ষে হিন্দু ঔপনিবেশিকগণ প্রথম পদ্মলতা এনে দুর্গপরিখার জলে পুতে দেয়, তারা আজ কোথায় ? কিন্তু জলে একবার শেকড় গেড়ে যে পদ্মলতা বেঁচে উঠেছিল, সে বংশামুক্রমে আজও অক্ষয় হয়ে বিরাজ করছে এই গভীর অরণ্যের মধ্যে। ইয়ার হোসেনের আদেশে তার দুজন অম্লচর জল মেপে দেখলে, এখানে পার হওয়া অসম্ভব। পরিখার জল বেশ গভীর। পরিখার এক বাছ ধরে এক দল ও অন্যদিকে অন্ত বাহুর সন্ধানে অন্ত দল বার হল। শেষের দলে গেল স্বশীল। - উত্তর থেকে দক্ষিণে লম্বা প্রাচীর-পরিখার উত্তর দিকে আধ মাইল-টাক গিয়ে ওদের দল সবিস্ময়ে দেখলে প্রাচীরের এক স্থান ভগ্ন। মাঝখান বেয়ে বেশ একটা রান্ত যেন ছিল স্বপ্রাচীন কালে, এখন অবিপ্তি ঘন বন । দেখে মনে হয় শত্রু দ্বাবা দুর্গ বা নগর-প্রাচীর হয়ত এখানে ভগ্ন হয়ে থাকবে, নতুবা এর অন্ত কোন কারণ নির্দেশ করা যায় না। দেখা গেল পরিখার সেইখানে প্রাচীন কালে বোধহয় কাঠের সেতু ছিল, এখন সেটা পড়েছে ভেঙে জলে। জলের গভীরতা সেখানে কম। কাঠের সেতু প্রথমে দেখা যায় নি। ইয়ার হোসেনের জনৈক অম্লচর প্রথমে জলের ধারে একটা শেকল দেখতে পায় । শেকলট টেনে জলের মধ্য থেকে একখণ্ড লোহার পাত বেকুল। আন্দাজ করা কঠিন নয় ষে এই লোহার পাত কাঠের চওড়া তক্তার গায়ে লাগানো ছিল। অনুমানটুকু ছাড়া কাঠের সেতুর অস্তিত্বের অন্য কোন নিদর্শন এতকাল পরে কিভাবে পাওয়া সম্ভব হতে পারে । ইয়ার হোসেন বললে—এখান দিয়ে পার হওয়া বাক-জল গভীর হবে না। স্বশীল সামান্ত একটু আপত্তি করলে—অথচ কেন বে করলে তা সে নিজেই জানে না। প্রথমে নামল ইয়ার হোসেন নিজে—তার পেছনে নামল স্বশীল। হাত তিন চার মাত্র জলে যখন ওরা গিয়েছে তখন ওরা দেখলে সামনে জলের বা গভীরতা, তাতে আর অগ্রসর