পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এগারো শঙ্কর একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল বোধ হয়, কিম্বা হয়তে অজ্ঞান হয়েই পড়ে থাকবে । মোটের ওপর যখন আবার জ্ঞান ফিরে এল, তখন ঘড়িতে বারোট—সম্ভবত: রাত বারোটাই হবে। ও উঠে আবার চলতে শুরু করলে। এক জায়গায় তার সামনে একটা পাথরের দেওয়াল পড়ল—তার রাস্ত যেন আটকে রেখেছে। টর্চের রাঙা আলো একটবার মাত্র জালিয়ে সে দেখলে, যে দেওয়াল ধরে সে এতক্ষণ যাচ্ছিল, তারই সঙ্গে সমকোণ করে এ দেওয়ালট আড়াআডি ভাবে তার.পথ রোধ করে দাডিয়ে। হঠাৎ সে কান খাড়া করলে , অন্ধকারের মধ্যে কোথায় যেন ক্ষীণ জলের শবা পাওয়া যাচ্ছে না ? হ্যা.ঠিক, জলের শব্দই বটে। “কুলু, কুলু, কুলু, কুলু—ঝরন-ধারার শব্দ–যেন পাথরের মুড়ির ওপর দিয়ে মাঝে মাঝে বেধে জল বইছে কোথাও । ভাল করে শুনে ওপ মনে হল, জলের শব্দটা হচ্ছে এই পাথরের দেওয়ালের ওপারে। দেওয়ালে কান পেতে শুনে ওর সে ধারণা আরও বদ্ধমূল হল। দেওয়াল ফুড়ে যাবার উপযুক্ত ফাক আছে কিন, টর্চের রাঙা আলোয় সন্ধান করতে করতে এক জায়গায় খুব নীচু ও সংকীর্ণ প্রাকৃতিক রন্ধ দেখতে পেলে। সেখান দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে অনেকট গিয়ে হাতে জল ঠেকৃলে। সন্তপণে ওপরের দিকে হাত দিয়ে বুঝলে, সেখানটাতে দাড়ানো যেতে পারে। দাডিয়ে উঠে ঘন অন্ধকারের মধ্যে কয়েক প। যেতেই, স্রোতযুক্ত বরফের মত ঠাণ্ড জলে পায়ের পাত। ডুবে গেল । • • • ঘন অন্ধকারের মধ্যেই নীচু হয়ে, ও প্রাণ ভরে ঠাণ্ড জল পান করে নিলে। তার পর টর্চের ক্ষীণ আলোয় জলের স্রোতের গতি লক্ষ্য করলে। এ ধরনের নিবারের স্রোতের উজান দিকে গুহার মুখ সাধারণতঃ হয় না। টর্চ নিবিয়ে সেই মহ নিবিড় অন্ধকারে পায়ে পায়ে জলের ধারা অনুভব করতে করতে অনেকক্ষণ ধরে চললে । নিঝর চলেছে একে বেকে, কখনও ডাইনে, কখনও বায়ে। এক জায়গায় যেন সেট। তিন-চারটে ছোট বড় ধারায় বিভক্ত হয়ে গিয়ে এদিক ওদিক চলে গিয়েছে, ওর মনে হল । সেখানে এসে সে দিশাহারা হয়ে পড়ল। টর্চ জেলে দেখলে স্রোত নানামুখী । আলভারেজের কথা মনে পড়ল, পথে চিহ্ন রেখে না গেলে, এখানে আবার গোল পাকিয়ে যাবার সম্ভাবনা | নীচু হয়ে চিহ্ন রেখে যাওয়ার উপযোগী কিছু খুজতে গিয়ে দেখলে, স্বচ্ছ, নিৰ্ম্মল জলধারায় এপারে ওপারে দুপারেই এক ধরনের পাথরের মুড়ি বিস্তর পড়ে আছে। সেই ধরনের পাথরের কুড়ির ওপর দিয়েও প্রধান জলধারা বয়ে চলেছে। অনেকগুলো মুড়ি পকেটে নিয়ে, সে প্রত্যেক শাখাটা শেষ পর্য্যস্ত পরীক্ষা করবে ভেবে, দুটাে চুড়ি ধারার পাশে রাখতে রাখতে গেল। একটা স্রোত থেকে খানিকদূর গিয়ে আবার