পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ বিভূতি-রচনাবলী সন্ধ্যার দিকে দূরদিগন্তে মেঘমালার মত পর্বতমালা দেখা গেল। শঙ্কর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলে না। পূৰ্ব্বদিকে একটাই মাত্র বড় পৰ্ব্বত, এখান থেকে দেখা পাওয়া সম্ভব, দক্ষিণ রোডেশিয়ার প্রাস্তবতা চিমানিমানি পৰ্ব্বতমালা। তাহলে কি বুঝতে হবে যে, সে বিশাল কালাহারি পদব্রজে পার হয়ে প্রায় শেষ করতে চলেছে। না ও-ও মরীচিকা ? কিন্তু রাত দশটা পৰ্য্যস্ত পথ চলেও জ্যোংস্কারাত্রে সে দূর-পৰ্ব্বতের সীমারেখা তেমনি স্পষ্ট দেখতে পেল । অসংখ্য ধন্যবাদ হে ভগবান, মরীচিকা নয় তবে । জ্যোৎস্বারাত্রে কেউ কখনো মরীচিকা দেখে নি। তবে কি প্রাণের আশা আছে ? আজ পৃথিবীর বৃহত্তম রত্নখনির মালিক সে। নিজের পরিশ্রমে ও দুঃসাহসের বলে সে তার স্বত্ব অর্জন করেছে। দরিদ্র বাংল। মায়ের বুকে সে যদি আজ বেঁচে ফেরে ! দুদিনের দিন বিকালে সে এসে পৰ্ব্বতের নীচে পৌছুলো। তখন সে দেখলে, পৰ্ব্বত পার হওয়া ছাড়া ওপারে যাওয়ার কোনো সহজ উপায় নেই। নইলে পচিশ মাইল মরুভূমিতে পাড়ি দিয়ে পৰ্ব্বতের দক্ষিণ প্রাস্ত ঘুরে আসতে হবে। মরুভূমির মধ্যে সে আর কিছুতেই যেতে রাজি নয়। সে পাহাড় পার হয়েই যাবে। এইখানে সে প্রকাগু একটা ভুল করলে। সে তুলে গেল যে সাড়ে বারো হাজার ফুট একটা পৰ্ব্বতমালা ডিঙিয়ে ওপারে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। রিখটারস্ভেল্ড পার হওয়ার মতই শক্ত। তার চেয়েও শক্ত, কারণ সেখানে আলভারেজ ছিল, এখানে সে একা । শঙ্কর ব্যাপারের গুরুত্বটা বুঝতে পারলে না, ফলে চিমানিমানি পৰ্ব্বত উত্তীর্ণ হতে গিয়ে প্রাণ হারাতে বসলো, ভীষণ প্রজলন্ত কালাহারি পার হতে গিয়েও সে অমন ভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হয় নি। চিমানিমানি পৰ্ব্বতের জঙ্গল খুব বেশী ঘন নয়। শঙ্কর প্রথম দিন অনেকটা উঠল—তার পর একটা জায়গায় গিয়ে পড়ল, সেখান থেকে কোনদিকে যাবার উপায় নেই। কোন পথটা দিয়ে উঠেছিল সেটাও আর খুজে পেলে না—তার মনে হল, সে সমতলভূমির যে জায়গা দিয়ে উঠেছিল, তার ত্রিশ ডিগ্রী দক্ষিণে চলে এসেছে। কেন যে এমন হল, এর কারণ কিছুতেই সে বার করতে পারলে না। কোথা দিয়ে কোথায় চলে গেল, কখনও উঠছে, কখনও নামছে, সূৰ্য্য দেখে দিক ঠিক করে নিচ্ছে, কিন্তু সাত-আট মাইল পাহাড় উত্তীর্ণ হতে এতদিন লাগছে কেন ? তৃতীয় দিনে আর একটা নতুন বিপদ ঘটল। তার আগের দিন একখানা আলগা পাথর গড়িয়ে তার পায়ে চোট লেগেছিল। তখন তত কিছু হয় নি, পরদিন সকালে আর সে শয্যা ছেড়ে উঠতে পারে না। হাটু ফুলেছে, বেদনাও খুব । দুর্গম পথে নাম-ওঠা করা এ অবস্থায় অসম্ভব । পাহাড়ের একটা ঝরনা থেকে ওঠবার সময় জল সংগ্রহ করে এনেছিল, তাই একটু একটু করে খেয়ে চালাচ্ছে। পায়ের বেদনা কমে না যাওয়া পৰ্য্যস্ত তাকে এখানেই অপেক্ষা করতে হবে । বেশীদূর যাওয়া চলবে না। সামান্য একটু-আধটু চলাফের