পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१8 বিভূতি-রচনাবলী নিঃশবে অসীম ধৈৰ্য্যের সঙ্গে যেন কিসের প্রতীক্ষা করছে। কি সব অমঙ্গলজনক দৃশু ! ভয়ে ওর গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। সত্যিই কি এতদিনে তায়ও মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে ! এতদিন পরে এল তা হলে ! সে-ও পারলে না রিখটার্স্ভেল্ড থেকে হীরে নিয়ে পালিয়ে যেতে । উ:, আজ কত টাকার মালিক সে । হীরের খনি বাদ যাকৃ, তার সঙ্গে যে ছখানা হীরে রয়েছে, তার দাম অস্ততঃ দু-তিন লক্ষ টাকা নিশ্চয় হবে। তার গরীব গ্রামে, গরীব বাপমায়ের বাড়ী যদি এই টাকা নিয়ে গিয়ে উঠতে পারতো, কত গরীবের চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারতো, গ্রামে কত দরিদ্র কুমারীকে বিবাহের যৌতুক দিয়ে ভাল পাত্রে বিবাহ দিত, কত সহায়হীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার শেষ দিন কটা নিশ্চিন্ত করে তুলতে পারতো.. কিন্তু সে-সব ভেবে কি হবে, যা হবার নয় ? তার চেয়ে এই অপূৰ্ব্ব রাত্রির নক্ষত্রালোকিত আকাশের শোভা, এই বিশাল পৰ্ব্বত ও মরুভূমির নিস্তব্ধ গম্ভীর রূপ, মৃত্যুর আগে শঙ্করও চায় চোখ ভরে দেখতে, সেই ইটালিয়ান যুবক গাত্তির মত। ওরা যে অদৃষ্টের এক অদৃশু তারে গাথা সবাই, আত্তিলিও গাত্তি ও তার সঙ্গীর, জিম্ কাটার, আলভারেজ, সে রাত গভীর হয়েছে। কি ভীষণ শীত ! ...একবার সে চেয়ে দেখলে, কোয়োটগুলো এরই মধ্যে কখন আরও নিকটে সরে এসেছে। অন্ধকারের মধ্যে আলো পড়ে তাদের চোখগুলো জলছে। শঙ্কর একখান জলস্ত কাঠ ছড়ে মারতেই ওরা সব দূরে সরে গেল -কিন্তু কি নিঃশব্দ ওদের গতিবিধি আর কি অসীম তাদের ধৈর্য্যও ! শঙ্করের মনে হল, ওরা জানে শিকার ওদের হাতের মুঠোয়, হাতছাড়া হবার কোনো উপায় নেই। ইতিমধ্যে সন্ধ্যাবেলায় সেই ধূসর নেকৃডে বাঘটাও দু-দুবার এসে কোয়োটদের পেছনে অন্ধকারে বসে দেখে গিয়েছে । একটুও ঘুমুতে ভরসা হল না ওর। কি জানি কোয়োট, আর নেকৃড়ের দল হয়তো তা হলে জীবন্তই তাকে ছিড়ে খাবে মৃত মনে করে। অবসন্ন, ক্লান্ত দেহে জেগেই বসে থাকতে হবে তাকে। ঘুমে চোখ চুলে আসলেও উপায় নেই। মাঝে মাঝে কোয়োটগুলো এগিয়ে এসে বসে, ও জলন্ত কাঠ ছুড়ে মারতেই সবে যায় দু-একটা হায়েনাও এসে ওদের দলে যোগ দিলে-হায়েনাদের চোখগুলো অন্ধকারে কি ভীষণ জলছে ! কি ভয়ানক অবস্থাতে পড়েছে। জনবিরল বর্বর দেশের জনশূন্য পৰ্ব্বতের সাড়ে তিন হাজার ফুট উপরে সে চলৎশক্তিহীন অবস্থায় বসে-গভীর রাত, ঘোর অন্ধকার-সামান্য আগুন জলছে.মাথার ওপর জলকণাশূন্য স্তন্ধ বায়ুমণ্ডলের গুণে আকাশের অগণ্য তারা জল জল করছে যেন ইলেক্‌ট্রিক আলোর মত-নীচে তার চারিধার ঘিরে অন্ধকারে মাংসলোলুপ নীরব কোয়োট, হায়েনার দল। تعبير" কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার এটাও মনে হল, বাংলার পাড়াগায়ে ম্যালেরিয়ায় ধুকে সে মরছে না। এ মৃত্যু বীরের মৃত্যু। পদব্রজে কালাহারি মরুভূমি পার হয়েছে সে—একা। মরে