পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Ե(: ও তো এ দেশের গাছ নয়। পাটনায় দেখেছি বাবুদের বাগানে। তাহার জ্ঞান দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইতে হয়। নিছক সৌন্দর্ঘ্যের এমন পূজারীই বা কটা দেখিয়াছি ? বনে বনে ভাল ফুল ও লতার বীজ ছড়াইয় তাহার কোন স্বার্থ নাই, এক পয়সা আর নাই, নিজে সে নিতান্তই গরীব, অথচ শুধু বনের সৌন্দৰ্য্য-সম্পদ বাড়াইবার চেষ্টায় তার এ অক্লান্ত পরিশ্রম ও উদ্বেগ । আমার বলিল-সরস্বতী কুণ্ডীর মত চমৎকার বন এ অঞ্চলে কোথাও নেই বাবুজী। কত গাছপালা যে আছে, আর কি দেখেছেন জলের শোভা । আচ্ছা, আপনি কি বিবেচনা করেন এতে পদ্ম হবে পুতে দিলে ? ধরমপুরের পাড়াগ অঞ্চলে পদ্ম আছে অনেক পুকুরে। ভাবছিলাম গেঁড় এনে পুতে দেব। আমি তাহাকে সাহায্য করিতে মনে মনে সঙ্কল্প করিলাম। দুজনে মিলয়া এ বনকে নতুন বনের ফুলে, লতায়, গাছে সাজাইব, সেদিন হইতে ইহা আমাকে যেন একটা নেশার মত পাইয়া বসিল। যুগলপ্রসাদ খাইতে পায় না, সংসারে বড় কষ্ট, ইহা আমি জানিতাম। সদরে লিথিয়া তাহাকে দশ টাকা বেতনে এটা মহুরীর চাকুরি দিলাম আজমাবাদ কাছারিতে । সেই বছরে আমি কলিকাতা হইতে সাটনের বিদেশী বন্ত পুষ্পের বীজ আনিয়া ও ডুয়াসের পাহাড় হইতে বন্ত জুইয়ের লতার কাটিং আনিয়া যথেষ্ট পরিমাণে রোপন করিলাম সরস্বতী হ্রদের বনভূমিতে। কি আহলাদ ও উৎসাহ যুগলপ্রসাদের! আমি তাহাকে শিখাইয় দিলাম এ উৎসাহ ও আনন্দ যেন সে কাছারির লোকের কাছে প্রকাশ না করে। তাহীকে তো লোকে পাগল ভাবিবেই, সেই সঙ্গে আমাকেও বাদ দিবে না। পর বৎসর বর্ষার জলে আমাদের রোপিত গাছ ও লতার ঝাড় অদ্ভুতভাবে বাড়ির উঠতে লাগিল। হ্রদের তীরের জমি অত্যস্তু উৰ্ব্বর, গাছপালাগুলিও যাহা পুতিয়াছিলাম, এদেশের আবহাওয়ার উপযোগী । কেবল সাটনের বীজের প্যাকেট লইয়া গোলমাল বাধিয়াছিল। প্রত্যেক প্যাকেটের উপর তাহারা ফুলের নাম ও কোন কোন স্থলে এক লাইনে ফুলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও দিয়াছিল। ভাল রং ও চেহারা বাছিয়া বাছিয়া যে বীজগুলি লাগাইলাম, তাহার মধ্যে ‘হোয়াইট বিম' ও রেড ক্যাম্পিয়ন এবং ‘স্ট্রিচওয়াট’ অসাধারণ উন্নতি দেখাইল। ফিক্সগ্নাভ ও উড-অ্যানিমোন মন হইল না। কিন্তু অনেক চেষ্টা করিয়াও “ডগ রোজ বা ‘হনিলাকৃল-এর চার বাচাইতে পারা গেল না । হলদে ধুতুরা-জাতীয় এক প্রকার ১.২ হ্রদের ধারে ধারে পুতিয়াছিলাম। খুব শীঘ্রই তাহার ফুল ফুটিল। যুগলপ্রসাদ পূর্ণিয়ার জঙ্গল হইতে বন্ত বয়ড়া লতার বীজ আনিয়াছিল, চার বাহির হইবার সাত মাসের মধ্যেই দেখি কাছাকাছি অনেক ঝোপের মাথা বয়ড়া লতায় ছাইরা যাইতেছে। বয়ড়া লতার ফুল যেমন স্বদূখ, তেমনি তাহার যুদ্ধ সুবাস। হেমস্তের প্রথমে একদিন দেখিলাম বয়ড়া লতায় অজস্ৰ কুঁড়ি ধরিয়াছে। যুগলপ্রসাদকে খবরটা দিতেই সে কলম ফেলিয়া আজমাবাদ কাছারি হইতে সাত মাইল দূরবর্তী সরস্বতী হ্রদের তীরে প্রায় দৌড়িতে দোঁড়িতেই আসিল।