পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ৯১ একটা জিনিস লক্ষ্য করিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়াছি। মটুকনাথ টোলঘরের জন্য জমি ও ঘর বাধিয়া দেওয়ার প্রার্থনা ছাড়া আমার কাছে কোন দিন কোন আর্থিক সাহায্য চায় নাই। কোন দিন বলে নাই, আমার চলে না, একটা উপায় করুন না। কাহাকেও সে কিছু জানায় না, সিপাহীরা নিজের ইচ্ছায় যা দেয়। বৈশাখ হইতে ভাদ্র মাসের মধ্যে মটুকনাথের টোলের ছাত্রসংখ্যা বেশ বাড়িল। দশবারোটি বাপে-তাড়ানো মায়ে-খেদানো গরীব বালক বিনা পয়সায় অল্প আয়াসে খাইতে পাইবার লোভে নানা জায়গা হইতে আসিয়া জুটিয়াছে। কারণ এ সব দেশে কাকের মুখে একথা ছড়ায়। ছাত্রগুলিকে দেখিয়া মনে হইল ইহারা পূৰ্ব্বে মহিষ চরাইত ; কারও মধ্যে এতটুকু বুদ্ধির উজ্জ্বলতা নাই—ইহারা পড়িবে কাব্য-ব্যাকরণ ? মটুকনাথকে নিরীহ মানুষ পাইরা পড়বার ছুতায় তাহার ঘাড়ে বসিয়া থাইতে আসিয়াছে। কিন্তু মটুকনাথের এসব দিকে খেয়াল নাই, সে ছাত্র পাইয়া মহা খুশী । একদিন শুনিলাম, টোলের ছাত্রগণ কিছু থাইতে না পাইয়া উপবাস করিয়া আছে। সেই সঙ্গে মটুকনাথও। মটুকনাথকে ডাকাইয়া ব্যাপার জিজ্ঞাসা করিলাম। কথাটা ঠিকই। সিপাহীরা চাদ করিয়া যে আট ও ছাতু দিয়াছিল, তাহ ফুরাইয়াছে, কয়েক দিন রাত্রে শুধু বাখুয়া শাক সিদ্ধ আহার করিয়া চলিতেছিল, আজ তাহাও পাওয়া যায়া নাই। তাহা ছাড়া উহা খাইয়া অনেকের অমুখ হওয়াতে কেহ থাইতে চাহিতেছে না। —তা এখন কি করবে পণ্ডিতজী ? —কিছু তো ভেবে পাচ্ছিনে হুজুর। ছোট ছোট ছেলেগুলো না খেয়ে থাকবে— আমি ইহাদের সকলে । জন্ত সিধা বাহির করিয়া দিবার ব্যবস্থা করিলাম। দু-তিন দিনের উপযুক্ত চাল, ডাল, ঘি, আটা । বলিলাম—টোল কি করে চালাবে, পণ্ডিতজী ? ও উঠিয়ে দাও । খাবে কি, খাওয়াuব কি ? দেখিলাম আমার কথায় সে আঘাত পাইয়াছে। বলিল—তাও কি হয় হুজুর ? তৈরী টোল কি ছাড়তে পারি ? ঐ আমার পৈতৃক ব্যবসায় । মটুকনাথ সদানন্দ লোক। তাহাকে এসব বুঝাইয়া ফল নাই। সে ছাত্র কয়টি লইয়৷ বেশ মনের মুখেই আছে দেখিলাম । আমার এই বনভূমির একপ্রান্ত যেন সেকালের ঋষিদের আশ্রম হইয়া উঠিয়াছে মটুকনাথের রূপায়। টােলের ছাত্রর কলরব করিয়া পড়াশুনা করে, মুগ্ধবোধের স্বত্র আওড়ায়, কাছারির লাউ-কুমড়ার মাচা হইতে ফল চুরি করে, ফুলগাছের ডাল পাতা ভাঙিয়া ফুল লইয়া যায়, এমন কি মাঝে মাঝে কাছারির লোকজনের জিনিসপত্রও চুরি যাইতে লাগিল —সিপাহীরা বলাবলি করিতে লাগিল, টোলের ছাত্রদের কাজ। একদিন নায়েবের ক্যাশবাক্স খোলা অবস্থায় তাহার ঘরে পড়িয়া ছিল। কে তাহার মধ্য হইতে কয়েকটি টাকা ও নায়েবের একটি ঘষা-সোনার আংটি চুরি করিল। তাহ লইয়া