পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

వశి বিভূতি-রচনাবলী খুব হৈ হৈ করিল সিপাহীরা। মটুকনাথের এক ছাত্রের কাছে কয়েকদিন পরে আংটিট পাওয়া গেল। সে কোমরের যুদ্ৰসিতে বাধিয়া রাখিয়াছিল, কে দেখিতে পাইয়া কাছারিতে আসিয়া বলিয়া দিল । ছাত্র বামালমুদ্ধ ধরা পড়িল । আমি মটুকনাথকে ডাকাইয়া পাঠাইলাম। সে সত্যই নিরীহ লোক, তাহার ভালমান্থষির স্বযোগ গ্রহণ করিয়া দুৰ্দ্দস্তি ছাত্রেরা যাহা খুশি করিতেছে। টোল ভাঙিবার দরকার নাই, অন্তত: কয়েকজন ছাত্রকে তাড়াইতেই হইবে । বাকি যাহারা থাকিতে চায়, আমি জমি দিতেছি, উহার নিজের মাথার ঘাম পারে ফেলিয়া জমিতে কিছু কিছু মকাই, চীনাঘাস ও তরকারির চাষ করুক। খাদ্য শস্ত যাহা উৎপন্ন হইবে, তাহাতেই উহাদের চলিবে । মটুকনাথ এ-প্রস্তাব ছাত্রদের কাছে করিল। বারোজন ছাত্রের মধ্যে আটজন শুনিবামাত্র পলাইল। চারজন রহিয়া গেল, তাও আমার মনে হয় বিদ্যাকুরাগের জন্ত নয়, নিতান্ত কোথাও কোন উপায় নাই বলিয়া। পূৰ্ব্বে মহিষ চরাইত, এখন না-হয় চাষ করিবে। সেই হইতে মটুকনাথের টোল চলিতেছে মন নয়। 8 ছটু সিং ও অন্তান্ত প্রজাদের জমি বিলি হইয়া গিয়াছে। সৰ্ব্বমুদ্ধ প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি। নাঢ় বইহারের জমি অত্যন্ত উৰ্ব্বর বলিয়া ঐ অংশেই দেড় হাজার বিঘা জমি একসঙ্গে উহাদের দিতে হইয়াছে। সেখানকার প্রান্তরসীমার বনানী অতি শোভাময়ী, কতদিন সন্ধ্যাবেল ঘোড়ায় আসিবার সময় সে বন দেখির মনে হইয়াছে, জগতের মধ্যে নাঢ় বইহারের এই বন একটা বিউটি স্পট—গেল সে বিউটি স্পট ! - দূর হইতে দেখিতাম বনে আগুন দিয়াছে; খানিকটা পোড়াইয়া না ফেলিলে যেন দুর্ভেদ্য জঙ্গল কাটা যায় না। কিন্তু সব জায়গায় তো বন নাই, দিগন্তব্যাপী প্রাস্তরের ধারে ধীরে নিবিড় বন, হয়ত প্রাস্তরের মাঝে মাঝে বন-ঝোপ, কত কি লতা, কত কি বনকুসুম ।’’’ চট, চট, শস্ব করিয়া বন পুড়িতেছে, দূর হইতে শুনি—কত শোভাময় লতাবিতান ধ্বংস হইয়া গেল, বসিয়া বসিয়া ভাবি। কেমন একটা কষ্ট হয় বলিয়া ওদিকে যাই না । দেশের একটা এত বড় সম্পদ, মানুষের মনে যাহা চিরদিন শাস্তি ও আনন্দ পরিবেষণ করিতে পারিত —একমুষ্টি গমের বিনিময়ে তাহ বিসর্জন দিতে হইল! কাৰ্ত্তিক মাসের প্রথমে একদিন জায়গাটা দেখিতে গেলাম। সমস্ত মাঠটাতে সরিষা বপন করা হইয়াছে—মাঝে মাঝে লোকজনের ঘর বাধিয়া বাস করিতেছে, ইহার মধ্যেই গরু-মহিষ, স্ত্রী-পুত্র আনিয়া গ্রাম বসাইয়া ফেলিয়াছে। শীতকালের মাঝামাঝি যখন সর্ষেক্ষেত হলুদ ফুলে আলো করিয়াছে তখন যে দৃপ্ত চোখের সম্মুখে উন্মুক্ত হইল, তাহার তুলনা নাই। দেড় হাজার বিধা ব্যাপী একটা বিরাট প্রান্তর দূর