পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏ e * বিভূতি-রচনাবলী জিজ্ঞাসা করিলাম—ও কি রান্না হচ্ছে ? নকছেদী বলিল—ঘাটে । —ঘাটে কি জিনিস ? এবার বোধ হয় রন্ধনরত মেয়েটি ভাবিল, এ বাংগালীবাবু সন্ধ্যাবেলা কোথা হইতে আসিয়া জুটিল। এ দেখিতেছি নিতান্ত বাতুল। কিছুই খোজ রাখে না দুনিয়ার। সে খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিয়া বলিল—ঘাটাে জান না বাবুজী ? মকাই-সেদ্ধ। যেমন চাল সেদ্ধ হলে বলে ভাত, মকাই সেদ্ধ করলে বলে ঘাটে । মেয়েটি আমার অজ্ঞতার প্রতি কৃপাবশতঃ কাঠের খুস্তির আগায় উক্ত দ্রব্য একটুখানি হাড়ি হইতে তুলিয়া দেখাইল । —কি দিয়ে খায় ? এবার হইতে যত কথাবাৰ্ত্তা মেয়েটিই বলিল । হাসি-হাসি মুখে বলিল—মুন দিয়ে, শাক দিয়ে—আবার কি দিয়ে থাবে বল না ! —শক রান্না হয়েছে ? —ঘাটাে নামিয়ে শাক চডাব । মটরশাক তুলে এনেছি। মেয়েটি খুবই সপ্রতিভ। জিজ্ঞাসা করিল—কলকাতায় থাক বাবুজী ? -ईf । —কি রকম জায়গা ? আচ্ছা, কলকাতায় নাকি গাছ নাই ? ওখানকার সব গাছপালা কেটে ফেলেছে ? —কে বললে তোমায় ? —একজন ওখানে কাজ করে আমাদের দেশের । সে একবার বলেছিল । কি রকম জায়গা দেখতে বাবুজী ? এই সরলা বন্ত মেয়েটিকে যতদূর সম্ভব বুঝাইবার চেষ্টা পাইলাম আধুনিক যুগের একটা বড় শহরের ব্যাপারখানা কি ? কতদূর বুঝিল জানি না, বলিল—কলকাত্তা শহর দেখতে ইচ্ছে হয়—কে দেখাবে ? তাহার পর আরও অনেক কথা বলিলাম তাহার সঙ্গে। রাত বাডিয়া গিয়াছে, অন্ধকার ঘন হইয়া আসিল। উহাদের রান্না শেষ হইয়া গেল। খুপড়ির ভিতর হইতে সেই বড় জামবাটিটা আনিয়া তাহাতে ফেন-ভাতের মত জিনিসটা ঢালিল। উপর উপর একটু কুন ছড়াইয়া বাটিটা মাঝখানে রাখিয়া ছেলেমেয়ের সবাই মিলিয়া চারিদিকে গোল হইয়া বসিয়া খাইতে আরম্ভ করিল। আমি বলিলাম—তোমরা এখান থেকে বুঝি দেশে ফিরবে ? নকৃছেদী বলিল—দেশে এখন ফিরতে অনেক দেরি। এখান থেকে ধরমপুর অঞ্চলে ধান কাটতে যাব—ধান তো এদেশে হয় না—ওখানে হয়। ধান কাটার কাজ শেষ হলে আবার যাব গম কাটতে মুঙ্গের জেলায়। গমের কাজ শেষ হতে জ্যৈষ্ঠ মাস এসে পড়বে।