পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক SNరి এক এক জায়গার ফাঁকা জঙ্গলের দিকে বনের কি অনুপম শোভা ! কি এক ধরনের <থোকা থোকা সাদা ফুল সারা বনের মাথা অলো করিয়া ফুটিয়া আছে ছায়াগহন অপরাহ্লের নীল আকাশের তলে। মানুষের চোখের আড়ালে সভ্য জগতের সীমা হইতে বহু দূরে এত সৌন্দৰ্য্য কার জন্য যে সাজানো ! বনোয়ারী বলিল—ও বুনো তেউড়ির ফুল, এই সময় জঙ্গলে ফোটে, হুজুর । এক রকমের লতা । যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই গাছের মাথা, ঝোপের মাথা, ঈষৎ নীলাভ শুভ্র বুনো তেউড়ির ফুল ফুটিয়া আলো করিয়া রহিয়াছে—ঠিক যেন রাশি রাশি পেজ নীলাভ কাপাস তুলা কে ছড়াইয়া রাখিয়াছে বনের গাছের মাথায় সৰ্ব্বত্র । ঘোড়া থামাইয়া মাঝে মাঝে কতক্ষণ ধরিয়া দাডাইয়াছি—এক এক জায়গার শোভা এমনই অদ্ভুত যে, সেদিকে চাহিয়৷ যেন একটা ছন্নছাড়া মনের ভাব হইয়া যায়—যেন মনে হয়, কত দূরে কোথায় আছি, সভ্য জগৎ হইতে বহু দূরে এক জনহীন অজ্ঞাত জগতেব উদাস, অপরূপ বন্ত সৌন্দর্ঘ্যের মধ্যে—যে জগতের সঙ্গে মানুষের কোনও সম্পর্ক নাই, প্রবেশের অধিকারও নাই, শুধু বন্ত জীবজন্তু, বৃক্ষলতার জগৎ । বোধ হয় আরও দেরী হইয়া গিয়াছিল আমার এই বার বার জঙ্গলের দৃপ্ত ই করিয়া থমকিয়া দাড়াইয়া দেখিবার ফলে। বেচারী বনোয়ারী পাটোয়ারী আমার তবে কাজ করে, সে জোর করিয়া আমায় কিছু বলিতে না পারিলেও মনে মনে নিশ্চয় ভাবিতেছে —(s বাঙালী বাবুটির মাথার নিশ্চয় দোষ আছে। একে দিয়া জমিদারীর কাজ আর কত দিনে চলিবে ? ) একটি বড় আসান-গাছের তলায় সবাই মিলিয়া আশ্রয় লওয়া গেল । আমরা আছি সবসুদ্ধ আট-দশজন লোক। বনোয়ারী বলিল—বড় একটা আগুন কর, আর সবাই কাছাকাছি ঘেষে থাকে । ছড়িয়ে থেকে না, নানা রকম বিপদ এ জঙ্গলে রাত্রিকালে । গাছের নীচে ক্যাম্প-চেয়ার পাতিয়া বসিয়াছি, মাথার উপর অনেক দূর পর্য্যন্ত ফাকা আকাশ, এখনও অন্ধকার নামে নাই, দূরে নিকটে জঙ্গলের মাথায় বুনো তেউড়ির সাদা ফুল ফুটিয়া আছে রাশি রাশি, অজস্ৰ ! আমার ক্যাম্পচেয়ারের পাশেই দীর্ঘ দীর্ঘ ঘাস অধিশুকনো, সোনালী রঙের। রোদ পোড়া মাটির সোদা গন্ধ, শুকনো ঘাসের গন্ধ, কি একটা বন-ফুলের গন্ধ, যেন দুর্গাপ্রতিমার রাঙতার ডাকের সাজের গন্ধের মত। মনের মধ্যে এই উন্মুক্ত, বন্ত জীবন আনিয়া দিয়াছে একট। জি ও আনন্দের অনুভূতি—যাহা কোথাও কখনও আসে না এই রকম বিরাট নির্জন প্রান্তর ও জনহীন অঞ্চল ছাড়া । অভিজ্ঞতা না থাকিলে বলিয়া বোঝানো বড়ই কঠিন সে মুক্ত-জীবনের উল্লাস । এমন সময় আমাদের এক কুলি আসিয়া পাটোয়ারীর কাছে বলিল একটু দূরে জঙ্গলের শুষ্ক ডালপালা কুড়াইতে গিয়া সে একটা জিনিস দেখিয়াছে। জায়গাটা ভাল নয়, ভূত বা পরীর আডিডা, এখানে না তাবু ফেলিল্লেই হইত। পাটােরার বলিল—চলুন হুজুর, দেখে আসি কি জিনিসটা। * दि. ब्र. ¢--४