পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>8 বিভূতি-রচনাবলী কিছুদূরে জঙ্গলের মধ্যে একটা জায়গা দেখাইয়া কুলিট বলিল—ঐখানে নিকটে গিয়ে দেখুন হুজুর। আর কাছে যাব না । বনের মধ্যে কাটা-লতা ঝোপ হইতে মাথা উচু স্তম্ভের মাথায় একটা বিকট মুখ খোদাইকরা, সন্ধ্যাবেলা দেখিলে ভয় পাইবার কথা বটে। মাহুষের হাতের তৈরী এ-বিষয়ে ভুল নাই, কিন্তু এ জনহীন জঙ্গলের মধ্যে এ স্তম্ভ কোথা হইতে আসিল বুঝিতে পারিলাম না। জিনিসটা কত দিনের প্রাচীন তাহাও বুঝিতে পারিলাম না । সে রাত্রি কাটিয়া গেল। সকালে উঠিয়া বেলা ন-টার মধ্যে আমরা গন্তব্য স্থানে পৌঁছিয়া গেলাম । সেখানে পৌঁছিয়া জঙ্গলের বর্তমান মালিকের জনৈক কৰ্ম্মচারীর সঙ্গে দেখা হইল। সে আমার জঙ্গল দেখাইয়া বেড়াইতেছে—হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে একটা শুষ্ক নালার ওপারে ঘন বনের মধ্যে দেখি একটা প্রস্তরস্তম্ভের শীর্ষ জাগিয়া আছে—ঠিক কাল সন্ধ্যাবেলার সেই স্তম্ভটার মত। সেই রকমের বিকট মুখ খোদাই করা । আমার সঙ্গে বনোয়ারী পাটোয়ারী ছিল, তাহাকেও দেখাইলাম। মালিকের কৰ্ম্মচারী স্থানীয় লোক, সে বলিল—ও আরও তিন-চারটা আছে এ-অঞ্চলে জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে। এ দেশে আগে অসভ্য বুনো জাতির রাজ্য ছিল, ও তাদেরই হাতের তৈরী। ওগুলো সীমানার নিশানদিহি খাম্বা । বলিলাম—থাম্বা কি করে জানলে ? সে বলিল—চিরকাল শুনে আসছি বাবুজী, তা ছাড়া সেই রাজার বংশধর এখনও বৰ্ত্তমান। বড় কৌতুহল হইল। —কোথায় ? লোকটা আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলিল—এই জঙ্গলের উত্তর সীমানার একটা ছোট বস্তি আছে—সেখানে থাকেন । এ-অঞ্চলে তার বড় খাতির । আমরা শুনেছি উত্তরে হিমালয় পাহাড়, আর দক্ষিণে ছোটনাগপুরের সীমানা, পূৰ্ব্বে কুশী নদী, পশ্চিমে মুঙ্গের—এই সীমানায় মধ্যে সমস্ত পাহাড়-জঙ্গলের রাজা ছিল ওঁর পূর্বপুরুষ। মনে পড়িল, পূর্বেও আমার কাছারিতে একবার গনোরী তেওয়ারী স্কুলমাস্টার গল্প করিয়াছিল বটে যে, এ-অঞ্চলের আদিম-জাতীয় রাজার বংশধর এখনও অাছে। এ-দিকের যত পাহাড়ী জাতি—তাহাকে এখনও রাজা বলির মানে। এখন সে কথা মনে পড়িল । জঙ্গলের মালিকের সেই কৰ্ম্মচারীর নাম বুদ্ধ,সিং, বেশ বুদ্ধিমান, এখানে অনেক কাল চাকুরী করিতেছে, এই সব বনপাহাড় অঞ্চলের অনেক ইতিহাস সে জানে দেখিলাম । বুদ্ধ,সিং বলিল—মুঘল বাদশাহের আমলে এর মুঘল সৈন্যদের সঙ্গে লড়েছে—এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তারা যখন বাংলা দেশে যেত—এর উপদ্রব করত তীর-ধনুক নিয়ে । শেষে রাজমহলে যখন মুঘল সুবাদারেরা থাকতেন, তখন এদের রাজ্য যায়। ভারী বীরের বংশ এরা,