পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক $Y6: এখন আর কিছুই নেই। যা কিছু বাকি ছিল, ১৮৬২ সালের সাওতাল-বিদ্রোহের পরে সব যায়। সাওতাল-বিদ্রোহের নেতা এখনও বেঁচে আছেন। তিনি বর্তমান রাজা । নাম দোবর পল্লি বীরবন্ধী। খুব বৃদ্ধ আর খুব গরীব। কিন্তু এ দেশের সকল আদিম জাতি এখনও তাকে রাজার সম্মান দেয়। রাজ্য না থাকলেও রাজা বলেই মানে। রাজার সঙ্গে দেখা করিবার বড়ই ইচ্ছা হইল। রাজসন্দর্শনে যাইতে হইলে কিছু নজর লইয়া যাওয়া উচিত। যার যা প্রাপ্য সন্মান, তাকে তা না-দিলে কৰ্ত্তব্যের হানি ঘটে। কিছু ফলমূল, গোটা দুই বন্ড মুরগী-বেলা একটার মধ্যে নিকটবৰ্ত্ত বস্তি হইতে কিনিয়া আনিলাম। এদিকের কাজ শেষ করিয়া বেলা দুইটার পরে বুদ্ধ, লিংকে বলিলাম—চল, রাজার সঙ্গে দেখা করে আসি । বুদ্ধ, সিং তেমন উৎসাহ দেখাইল না। বলিল—আপনি সেখানে কী যাবেন! আপনাদের সঙ্গে দেখা করবার উপযুক্ত নয়। পাহাড়ী অসভ্য জাতের রাজা, তাই বলে কি আর আপনাদের সমান সমান কথা বলবার যোগ্য বাবুজী ? সে তেমন কিছু নয়। তাহার কথা না শুনিয়াই আমি ও বনোয়ারীলাল রাজধানীর দিকে গেলাম। তাহাকেও সঙ্গে লইলাম। রাজধানীট খুব ছোট, কুড়ি-পচিশ ঘর লোকের বাস । ছোট ছোট মাটির ঘর, খাপরার চাল। পরিষ্কার করিয়া লেপা-পোছা । দেওয়ালের গায়ে মাটির সাপ, পদ্ম, লতা প্রভৃতি গড় । ছোট ছোট ছেলেরা খেলা করিয়া বেড়াইতেছে, স্ত্রীলোকের গৃহকৰ্ম্ম করিতেছে। কিশোরী ও যুবতী মেয়েদের সুঠাম গড়ন ও নিটোল স্বাস্থ্য, মুখে কেমন মুন্দর একটা বিণ্য প্রত্যেকেরই। সকলেই আমাদের দিকে অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল। বুদ্ধ,সি একজন স্ত্রীলোককে বলিল-জ ছেরে ? স্ত্রীলোকটি বলিল, সে দেখে নাই। তবে কোথায় আর যাইবে, বাড়ীতেই আছে। & আমরা গ্রামে যেখানে আসিয়া দাড়াইলাম, বুদ্ধ সিং-এর ভাবে মনে হইল এইবার রাজপ্রাসাদের সম্মুখে নীত হইয়াছি। অন্ত ঘরগুলির সঙ্গে রাজপ্রাসাদের পার্থক্য এই মাত্র লক্ষ্য করিলাম যে, ইহার চারিপাশ পাথরের গাচিলে ঘেরা—বস্তির পিছনেই অকুচ পাহাড়, সেখান হইতেই পাথর আনা হইয়াছে। রাজবাড়ীতে ছেলেমেয়ে অনেকগুলি—কতকগুলি খুব ছোট। তাদের গলায় পুতির মালা ও নীল ফলের বীজের মালা। দু-একটি ছেলে-মেয়ে দেখিতে বেশ মুত্র ষোল-সতের বছরের একটি মেয়ে বুদ্ধ সিং-এর ডাকে ছুটির বাহিরে