পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b" বিভূতি-রচনাবলী যুবক যেন নবীন শালতরু, পেশীবহুল সবল নধর দেহ । সে বলিল—বাবুজী, শজারুর মাংস খান ? পরে তাহার পিতামহের দিকে চাহিয়া বলিল—পাহাড়ের ওপারের বনে ফাদ পেতে রেখেছিলাম, কাল রাত্রে দুটো সজারু পড়েছে। শুনিলাম রাজার তিনটি ছেলে, তাহদের আট-দশটি ছেলেমেয়ে । এই বৃহৎ রাজপরিবারের সকলেই এই গ্রামে একত্র থাকে। শিকার ও গোচারণ প্রধান উপজীবিকা । এ বাদে বনের পাহাড়ী জাতিদের বিবাদ-বিসংবাদে রাজার কাছে বিচারপ্রার্থী হইয়া আসিলে কিছু কিছু ভেট, ও নজরানা দিতে হয়—দুধ, মুরগী, ছাগল, পার্থীয় মাংস বা ফলমূল । বলিলাম—আপনার চাষবাস আছে ? দোবর পান্না গর্বের মুরে বলিলেন—ওসব আমাদের বংশে নিয়ম নেই। শিকার করার মান সকলের চেয়ে বড়, তাও এক সময়ে ছিল বর্শ নিয়ে শিকার সবচেয়ে গৌরবের । তীরধন্থকের শিকার দেবতার কাজে লাগে না, ও বীরের কাজ নয়। তবে এখন সবই চলে । আমার বড় ছেলে মুঙ্গের থেকে একটা বন্দুক কিনে এনেছে ; আমি কখনও ছুই নি। বর্শ ধরে শিকার আসল শিকার । ভানুমতী আবার আসিয়া একটা পাথরের ভীড় আমাদের কাছে রাখিয়া গেল । রাজা বলিলেন—তেল মাখুন। কাছেই চমৎকার ঝরণী—স্নান করে আমুন সকলে । আমরা স্নান করিয়া আসিলে রাজা আমাদের রাজবাড়ীর একটা ঘরে লইয়া যাইতে বলিলেন । ভানুমতী একটা ধামায় চাল ও মেটে আলু আনিয়া দিল। জগরু শজারু ছাড়াইয়া মাংস আনিয়া রাখিল কাচ শালপাতার পাত্রে। ভানুমতী আর একবার গিয়া দুধ ও মধু আনিল। আমার সঙ্গে ঠাকুর ছিল না, বনোয়ার মেটে আলু ছাড়াইতে বসিল, আমি রাধিবার চেষ্টায় উকুন ধরাতে গেলাম। কিন্তু শুধু বড় বড় কাঠের সাহায্যে উকুন ধরানো কষ্টকর। দু-একবার চেষ্টা করিয়া পারিলাম না, তখন ভানুমতী তাড়াতাড়ি একটা পার্থীর শুকনো বাসা আনিয়া উকুনের মধ্যে পুরিয়া দিতে আগুন বেশ জলিয়া উঠিল। দিয়াই দূরে সরিয়া গিয়া দাড়াইল। ভানুমতী রাজকন্যা বটে, কিন্তু বেশ অমায়িক স্বভাবের রাজকন্যা । অথচ দিব্য সহজ, সরল মর্য্যাদাজ্ঞান। রাজা দেবিরু পায় সব সময় রান্নাঘরের দুয়ারটির কাছে বসিয়া রছিলেন। আতিথ্যের এতটুকু ক্রটি না ঘটে। আহারাদির পর বলিলেন—আমার তেমন বেশী ঘরদেরও নেই, আপনাদের বড় কষ্ট হল । এই বনের মধ্যে পাহাড়ের উপরে আমার বংশের রাজাদের প্রকাও বাড়ীর চিহ্ন এখনও আছে। আমি বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শুনেছি বহু প্রাচীনকালে ওখানে আমার পূৰ্ব্বপুরুষের বাস করতেন। সে দিন কি আর এখন আছে! আমাদের পূৰ্ব্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত দেবতা এখনও সেখানে আছেন । আমার বড় কৌতুহল হইল, বলিলাম—যদি আমরা একবার দেখতে যাই তাতে কি