পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Xసి কোনও আপত্তি আছে, রাজাসাহেব ? –এর আবার আপত্তি কি। তবে দেখবার এখন বিশেষ কিছু নেই। আচ্ছ, চলুন আমি যাব । জগর আমাদের সঙ্গে এস। আমি আপত্তি করিলাম—বিরানব্বই বছরের বৃদ্ধকে আর পাহাড়ে উঠাইবার কষ্ট দিতে মন সরিল না । সে আপত্তি টিকিল না, রাজাসাহেব হাসিয়া বলিলেন—ও পাহাড়ে আমার তো প্রায়ই উঠতে হয়, ওর গায়েই আমার বংশের সমাধিস্থান। প্রত্যেক পূর্ণিমায় আমার সেখানে যেতে হয়। চলুন, সে-জায়গাও দেখাব। উত্তর-পূৰ্ব্ব কোণ হইতে অনুচ্চ শৈলমাল (স্থানীয় নাম ধনারি ) এক স্থানে আসিয়া যেন হঠাৎ ঘুরিয়া পূৰ্ব্বমুখী হওয়ার দরুণ একটাঙ্গজের স্বষ্টি করিয়াছে, এই খাজের নীচে একটা উপত্যক, শৈলসামুর অরণ্য সারা উপত্যক ব্যাপিয়া যেন সবুজের ঢেউয়ের মত নামিয়া আসিয়াছে, যেমন ঝরণা নামে পাহাড়ের গা বাহিয়া। অরণ্য এখানে ঘন নয়, ফণক৷ ফাকা —বনের গাছের মাথায় মাথায় মুদূর চক্রবালরেখায় নীল শৈলমাল, বোধহয় গয়া কি রামগড়ের দিকের—যতদূর দৃষ্টি চলে শুধুই বনের শীর্ষ, কোথাও উচু, বড় বড় বনস্পতিসকুল, কোথাও নীচু, চারা শাল ও চারা পলাশ। জঙ্গলের মধ্যে সরু পথ বাহিরা,পাহাড়ের উপর উঠিলাম । এক জায়গায় খুব বড় পাথরের চাই আড়ভাবে পোতা, ঠিক যেন একখানা পাথরের কড়ি বা টেকির আকারের। তার নীচে কুম্ভকারদের হাড়ি-কলসী পোড়ানো পণ-এর গর্ভের মত কিংবা মাঠের মধ্যে খেকশিয়ালী যেমন গৰ্ত্ত কাটে—এই ধরনের প্রকাও একটা বড় গৰ্ত্তের মুখ। গৰ্ত্তের মুখে চারা শালের বন । রাজা দেবেরু বলিলেন- এই গর্ভের মধ্যে ঢুকতে হবে। আমুন আমার সঙ্গে। কোন ভয় নেই। জগর আগে যাও। প্রাণ হাতে করিয়া গর্ভের মধ্যে ঢুকিলাম। বাঘ ভালুক তে থাকিতেই পারে, না থাকে সাপ তো আছেই । গৰ্ত্তের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়া খানিকদূর গিয়া তবে সোজা হইয়া দাড়ানো যায়। ভয়ানক অন্ধকার ভিতরে প্রথমটা মনে হয়, কিন্তু চোখ অন্ধকারে কিছুক্ষণ অভ্যস্ত হইয়া গেলে আর তত অসুবিধা হয় না ; জায়গাটা প্রকাও একটা গুহ, কুড়ি-বাইশ হাত লম্বা, হাত পনের চওড়া —উত্তর দিকের দেওয়ালের গায়ে আবার একটা খেকশিয়ালীর মত গৰ্ত্ত দিয়া খানিক দূর গেলে দেওয়ালের ওপারে ঠিক এই রকম নাকি আর একটা গুহা আছে—কিন্তু সেটাতে আমার ঢুকিবার আগ্রহ দেখাইলাম না। গুহার ছাদ বেশী উচু নয়, একটা মানুষ সোজা হইয়া . দাড়াইয়া হাত উচু করিলে ছাদ ছুইতে পারে। চাম্সে ধরনের গন্ধ গুহার মধ্যে—বাছুড়ের আড্ডা—এ ছাড়া ভাম, শৃগাল, বনবিড়াল প্রভৃতি থাকে শোনা গেল। বনোয়ারী পাটােয়ারী চুপি চুপি বলিল—হুজুর, চলুন বাইরে, এখানে আর বেশী দেরি করবেন না। ইহাই নাকি দেবিরু পান্নার পূর্বপুরুষদের দুর্গ প্রাসাদ। .