পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ একদিন রাজু পাড়ে কাছারিতে খবর পাঠাইল যে বুনো শুওরের দল তাহার চীনা ফসলের ক্ষেতে প্রতি রাত্রে উপদ্রব করিতেছে, তাহদের মধ্যে কয়েকটি দাতওয়াল ধাড়ী শুওরের ভয়ে সে ক্যানেক্সা পিটানো ছাড়া অন্ত কিছু করিতে পারে না-কাছারি হইতে ইহার : প্রতিকার না করিলে তাহার সমুদয় ফসল নষ্ট হইতে বসিয়াছে। শুনিয়া নিজেই বৈকালের দিকে বন্দুক লইয়া গেলাম। রাজুর কুটার ও জমি নাচবইহারের ঘন জঙ্গলের মধ্যে। সেদিকে এখনও লোকের বসবাস হয় নাই, ফসলের ক্ষেতের পত্তনও খুব কম হইয়াছে, কাজেই বন্ত জন্তুর উপদ্রব বেশী। দেখি রাজু নিজের ক্ষেতে বসিয়া কাজ করিতেছে। আমায় দেখিয়া কাজ ফেলিয়া ছুটির আসিল। আমার হাত হইতে ঘোড়ার লাগাম লইয়া নিকটের একটা হরীতকী গাছে ঘোড়া বাধিল । বলিলাম—কই রাজু, তোমায় যে আর দেখি নে, কাছারির দিকে যাও না কেন ? রাজুর খুপড়ির চারিদিকে দীর্ঘ কাশের জঙ্গল, মাঝে মাঝে কেঁদ ও হরীতকী গাছ। কি করিয়া যে এই জনশূন্ত বনে সে একা থাকে। এ জঙ্গলে কাহারও সহিত দিনান্তে একটি কথা বলিবার উপায় নাই—অভূত লোক বটে। - রাজু বলিল—সময় পাই কই যে কোথাও যাব হুজুর, ক্ষেত্রের ফসল চৌকি দিতেই প্রাণ বেরিয়ে গেল। তার ওপর মহিষ আছে। তিনটি মহিষ চরাইতে ও দেড়-বিঘা জমির চাষ করিতে এত কি ব্যস্ত থাকে যে সে লোকালয়ে যাইবার সময় পায় না, একথা জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছিলাম–কিন্তু রাজু ভাপনা হইতেই তাহার দৈনন্দিন কাৰ্য্যের য তালিকা দিল, তাহাতে দেখিলাম তাহার নিশ্বাস ফেলবার অবকাশ না থাকার কথা । ক্ষেতখামারের কাজ, মহিষ চরানো, দোয়া, মাখনতোলা, পূজা-অৰ্চনা, রামায়ণ-পাঠ, রান্না-খাওয়া—শুনিয়া যেন আমারই ইপি লাগিল। কাজের লোক বটে রাজু! ইহার উপর নাকি সারা-রাত জাগিয়া ক্যনেস্ত্রা পিটাইতে হয়। বলিলাম—শূওর কখন বেরোয় ? - —তার তো কিছু ঠিক নেই হুজুর। তবে রাত হলেই বেরোর বটে। একটু বমুন, দেখবেন কত আসে । t কিন্তু আমার কাছে সৰ্ব্বাপেক্ষ কৌতুহলের বিষয়—রাজু একা এই জনশূন্ত স্থানে কি করিয়া বাস করে। কথাটা জিজ্ঞাসা করিলাম। . রাজু বলিল—অভ্যেস হয়ে গিয়েছে, বাবুজী। বহু দিন এমনি ভাবেই আছি—কষ্ট তো হয়ই না, বরং আপন মনে বেশ আনন্দে থাকি। সারাদিন খাট, সন্ধ্যাবেল ভজন গাই, ভগবানের নাম নিই, বেশ দিন কেটে যায়।