পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৪ বিভূতি-রচনাবলী রাজু, কি গন্থ মাহীতে, কি জয়পাল—এ ধরনের মানুষ আরও অনেক আছে জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে—ইহাদের মধ্যে একটি নূতন জগৎ দেখিলাম যে জগৎ আমার পরিচিত নয়। আমি জানি রাজুর একটি সাংসারিক বিষয়ে অত্যন্ত আসক্তি আছে, সে চ খাইতে অত্যস্ত ভালবাসে। অথচ এই জঙ্গলের মধ্যে চায়ের উপকরণ সে কোথায় পায়, এই ভাবিয়া আমি নিজে চা ও চিনি লইয়া গিয়াছিলাম। বলিলাম-রাজু, একটু চা কবে তো । আমার কাছে সব আছে । রাজু মহা আনন্দে একটি তিন-সের লোটাতে জল চড়াইয় দিল । চা প্রস্থত হইল, কিন্তু একটি মাত্র ছোট কাসার বাটি ব্যতীত অন্ত পত্রি নাই । তাহতেই আমার চা দিয়া সে নিজে বড় লোটাটি লইয়া চা খাইতে বসিল । রাজু হিন্দী লেখাপড়া জানে বটে, কিন্তু বহির্জগৎ সম্বন্ধে তাহাব কোন জ্ঞান নাই । কলিকাতা নামটা শুনিষাছে, কোন দিকে জানে না। বোম্বাই বা দিল্লীর বিষয়ে তার ধারণা চন্দ্রলোকের ধারণার মত—সম্পূর্ণ অবাস্তব ও কুয়াসাচ্ছন্ন। শহরের মধ্যে সে দেখিয়াছে পূর্ণিয়, তাও অনেক বছর আগে এবং মাত্র কয়েক দিনের জন্য সেখানে গিযাছিল। জিজ্ঞাসা করিলাম—মোটর গাড়ী দেখেছ রাজু ? —ন হুজুর, শুনেছি বিনা গকতে বা ঘোডীয় চলে, খুব ধেীয়া বেরোয়, আজকাল পূৰ্ণিয় শহরে অনেক নাকি এসেছে । আমার তো সেখানে অনেক কাল যাওয়া নেই, আমরা গরীব লোক, শহুরে গেলেই তো পয়স চাই । রাজুকে জিজ্ঞাসা করিলাম সে কলিকাতা যাইতে চায় কি না। যদি চায়, আমি তাহাকে একবার ঘুরাইয়া আনিব, পয়সা লাগিবে না। রাজু বলিল—শহর বড খারাপ জায়গা, চোর গুণ্ড জুয়াচেীবের আডড শুনেছি। সেখানে গেলে শুনেছি যে জাত থাকে না । সব লোক সেখানকার বদমাইস । আমার এ-দেশের একজন লোক কোন শহরের হাসপাতালে গিয়েছিল, তার পায়ে কি হয়েছিল সেই জন্তে । ডাক্তার ছুরি দিয়ে পা কাটে আর বলে, তুমি আমাকে কত টাকা দেবে ? বললে দশ টাকা দেব। তখন ডাক্তার আরও কাটে! আবার বললে—এখনও বল কত টাকা দেবে ? সে বললে—আরও পাচ টাকা দেব, ডাক্তণরসাহেব, আর কেটে না । ডাক্তার বললে— ওতে হবে না—বলে আবার পা কাটতে লাগল। সে গরীব লোক, যত কঁাদে, ডাক্তার ততই ছুরি দিয়ে কাটে–কাটতে কাটতে গোটা পা-খানাই কেটে ফেললে। উঃ, কি কাণ্ড ভাবুন তো হুজুর ! রাজুর কথা শুনিয়া হাস্য সংবরণ করা দায় হইয়া উঠিল । মনে পড়িল এই রাজুই একবার আকাশে রামধন্থ উঠিতে দেখিয়া আমাকে বলিয়াছিল—রামধন্থ যে দেখেছেন বাবুজী, ও ওঠে উইয়ের ঢিবি থেকে, আমি স্বচক্ষে দেখেছি। রাজুর খুপড়ির সামনের উঠানে একটি বড় খুব উচু আসান গাছ আছে, তারই তলায় বসিয়া আমরা চা খাইতেছিলাম—যেদিকে চাই, সেদিকেই ঘন বন—কেঁদ, আমলকী, পুষ্পিত