পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক *(t বহেড়া লতার ঝোপ ; বহেড়া ফুলের একটি মৃদ্ধ সুগন্ধ সান্ধ্য বাতাসকে মিষ্ট করিয়া তুলিয়াছে। আমার মনে হইল এসব স্থানে বসিয়া এমন ভাবে চা খাওয়া জীবনের একটা সৌন্দৰ্য্যময় অভিজ্ঞতা। কোথায় এমন অরণ্যপ্রান্তর, কোথায় এমন জঙ্গলে-ঘেরা কাশের কুটার, রাজুর মত মানুষই বা কোথায় ? এ অভিজ্ঞতা যেমন বিচিত্র, তেমনই দুপ্রাপ্য। বলিলাম—আচ্ছা রাজু, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে এস না কেন ? তোমার আর তা হলে কষ্ট করে রোধে খেতে হয় না । রাজু বলিল—সে বেঁচে নেই। আজ সতের-আঠারো বছর মারা গিয়াছে, তার পর থেকে বাড়ীতে মন বসাতে পারি নে আর ! রাজুর জীবনে রোমান্স ঘটিয়াছিল, এ ভাবিতে পারাও কঠিন বটে, কিন্তু অতঃপর রাজু যে গল্প করিল, তাহাকে ও-ছাড়া অন্ত নামে অভিহিত করা চলে না । রাজুর স্ত্রীর নাম ছিল সর্জু (অর্থাৎ সরষ্ণু), রাজুর বয়স যখন আঠারো ও সরযুর চৌদ– তখন উত্তর-ধরমপুর, শুামলালটোলাতে সরযুর বাপের টোলে রাজু দিনকতক ব্যাকরণ পড়িতে धर्मैग्न ! রাজুকে বলিলাম—কতদিন পড়েছিলে ? —কিছু না বাবুজী ; বছরখানেক ছিলাম, কিন্তু পরীক্ষা দিই নি। সেখানে আমাদের প্রথম দেখাশুনো এবং ক্রমে ক্রমে— আমাকে সমীহ করিয়া রাজু অল্প কাশিয়া চুপ করিল। আমি উৎসাহ দিবার সুরে বলিলাম—তার পর বলে যাও— —কিন্তু, হুজুর, ওর বাবা আমার অধ্যাপক । আমি কি করে তাকে এ-কথা বলি ? এক দিন কাৰ্ত্তিক মাসে ছট, পববের দিন সরযু ছোপানো হলদে শাড়ী পরে কুশী নদীতে একদল মেয়ের সঙ্গে নাইতে যাচ্ছে, আমি— রাজু কাশিয়া আবার চুপ করিল। পুনরায় উৎসাহ দিয়া বলিলাম—বল, বল, তাতে কি ? —ওকে দেখবার জন্তে আমি একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলাম। এর কারণ এই যে ইদানীং ওর সঙ্গে আমার আর তত দেখাশুনো হত না—এক জায়গায় ওর বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। যখন দলটি গাইতে গাহতে—আপনি তো জানেন ছট, পরবের সময় মেয়েরা গান করতে করতে নদীতে ছট, ভাসাতে যায় ?--তার পর যখন ওরা গাইতে গাইতে আমার সামনে এল, ও আমায় দেখতে পেয়েছে গাছের আড়ালে। ও-ও হাঁসলে, আমিও হাসলাম। আমি হাত নেড়ে ইশারা করলাম, একটু পিছিয়ে পড়–ও হাত নেড়ে বললে— এখন নয়, ফেরবার সময়ে । - রাজুর বাহার-বছর বয়সের মুখমণ্ডলে বিংশবর্ষীয় তরুণ প্রেমিকের লাজুকতা ও চোখে একটি স্বল্পভরা মুদুর দৃষ্টি ফুটিল ঐ-কথা বলিবার সময়—যেন জীবনের বহু পিছনে প্রথম যৌবনের পুণ্য দিনগুলিতে যে কল্যাণী তরুণী ছিল চতুর্দশ-বর্ষদেশে—তাহাকেই খুজিতে বাহির