পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> ab" বিভূতি-রচনাবলী কল্পনায় দূর ভবিষ্যতে নব নব বিশ্বের আবির্ভাব, নব নব সৌন্দর্ঘ্যের জন্ম, নানা নব প্রাণের বিকাশ বীজৰূপে নিহিত। শুধু যে-আত্মা নিরলস অবকাশ যাপন করে জ্ঞানের আকুল পিপাসার, যার প্রাণ বিশ্বের বিরাটত্ব ও ক্ষুদ্রত্বের সম্বন্ধে সচেতন আনন্দে উল্লসিত—জন্মজন্মাস্তরের পথ বাহিয়া দূর যাত্রার আশায় যার ক্ষুদ্র তুচ্ছ বৰ্ত্তমানের দুঃখ-শোক বিন্দুবৎ মিলাইয়া গিয়াছে. সে-ই তাদের সে রহস্যরূপ দেখিতে পায়। নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ. এভারেস্ট শিখরে উঠিয়া যাহারা তুষারপ্রবাহে ও ঝঙ্কায় প্রাণ দিয়াছিল, তাহার বিশ্বদেবতার এই বিরাট রূপকে প্রত্যক্ষ করিয়াছে.কিংবা কলম্বাস যখন আজোরেস্ দ্বীপের উপকূলে দিনের পর দিন সমুদ্রবাহিত কাষ্ঠখণ্ডে মহাসমুদ্রপারের অজানা মহাদেশের বাৰ্ত্তা জানিতে চাহিয়াছিলেন—তখন বিশ্বের এই লীলাশক্তি র্তার কাছে ধরা দিয়াছিল—ঘরে বসিয়া তামাক টানিয়া প্রতিবেশীর কন্যার বিবাহ ও ধোপা-নাপিত করিয়া যাহারা আসিতেছে—তাহদের কৰ্ম্ম নয় ইহার স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম করা । ૨ মিছি নদীর উত্তর পাডে জঙ্গলের ও পাহাড় মধ্যে সার্ভে হইতেছিল। এখানে আজ আট দশ দিন তাবু ফেলিয়া আছি। এখনও দশ-বারো দিন হয়ত থাকিতে হইবে। স্থানটা আমাদের মহাল হইতে অনেক দূরে, রাজা দেবিরু পান্নার রাজত্বের কাছাকাছি। রাজত্ব বলিলাম বটে, কিন্তু রাজা দেবিক তে রাজ্যহীন রাজা—তাহার আবাসস্থলের খানিকটা নিকটে পর্য্যন্ত বলা যায়। বড চমৎকার জায়গা । একটা উপত্যক, মুখের দিকটা বিস্তৃত, পিছনের দিক সংকীর্ণ— , —পূৰ্ব্বে পশ্চিমে পাহাড়শ্রেণী—মধ্যে এই অশ্বক্ষুরাকৃতি উপত্যকা—বন্ধুর ও জঙ্গলাকীর্ণ, ছোট বড় পাথর ছড়ানো সৰ্ব্বত্র, কাট-বাশের বন, আরও নানা গাছ-পালার জঙ্গল । অনেকগুলি পাহাড়ী ঝরনা উত্তর দিক হইতে নামিয়া উপত্যকার মুক্ত প্রান্ত দিয়া বাহিরের দিকে চলিয়াছে। এই সব ঝরনার দু-ধারে বন বড় বেশী ঘন, এবং এত দিনের বসবাসের অভিজ্ঞতা হইতে জানি এই সব জায়গাতেই বাঘের ভয় । হরিণ আছে, বন্ত মোরগ ডাকিতে শুনিয়াছি দ্বিতীয় প্রহর রাত্রে। ফেউয়ের ডাক শুনিয়াছি বটে, তবে বাঘ দেখি নাই বা আওয়াজ পাই নাই ! পূৰ্ব্বদিকের পাহাড়ের গায়ে একটা প্রকাও গুহ । গুহার মুখের প্রাচীন কাপালো বটগাছ—দিনরাত শনশন করে। দুপুর রোদে নীল আকাশের তলায় এই জনহীন বঙ্গ উপত্যক ও গুহা প্রাচীন যুগের ছবি মনে আনে, যে-যুগে আদিম জাতির রাজাদের হয়ত রাজপ্ৰসাদ ছিল এই গুহাট, যেমন রাজা দোবর পান্নার পূর্বপুরুষের আবাস-গুহ । গুহার দেওয়ালে একস্থানে কতকগুলো কি খোদাই করা ছিল, সম্ভবত কোন ছবি—এখন বড়ই