পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক OLL কি মাছ ধরিবার চেষ্টা করিতেছে। গ্রামের মধ্যে ঠাসাঠাসি বসতি। চালে চালে বাড়ী, অনেক বাড়ীতেই উঠান বলিয়া জিনিস নাই। মাঝারিগোছের একখানা খোলা-ছাওয়া বাড়ীতে বেঙ্কটেশ্বর প্রসাদ আমায় লইয়া গিয়া তুলিল। রাস্তার ধারেই তার বাড়ীর বাইরের ঘর, সেখানে একখানা কাঠের চৌকিতে বসিলাম। একটু পরে কবি-গৃহিনীকেও দেখিলাম—তিনি স্বহস্তে দইবড়া ও মকাইভাজা আমার জন্য লইয়া যে চৌকিতে বসিয়াছিলাম তাহারই একপ্রান্তে স্থাপন করিলেন বটে, কিন্তু কথা কহিলেন না, যদিও তিনি অবগুণ্ঠনবতীও ছিলেন না। বয়স চব্বিশ-পচিশ হইবে, রং তত ফসর্ণ না হইলেও মন্দ নয়, মুখশ্ৰী বেশ শাস্ত, মুন্দরী বলা না গেলেও কবিপত্নী কুরূপ নহেন। ধরনধারনের মধ্যে একটি সরল, অনারাসশিষ্টতা ও শ্ৰী । আর একটা জিনিস লক্ষ্য করিলাম-কবিগৃহিণীর স্বাস্থ্য। কি জানি কেন এদেশে যেখানে গিয়াছি, মেয়েদের স্বাস্থ্য সৰ্ব্বত্র বাংলা দেশের মেয়েদের চেয়ে বহুগুণে ভাল বলিয়া মনে হইয়াছে। মোটা নয়, অথচ বেশ লম্বা, নিটোল, র্যাটসাট গড়নের মেরে এদেশে যত বেশী, বাংলা দেশে তত দেখি নাই। কবি-গৃহিণীও ওই ধরনের মেয়েটি। - একটু পরে তিনি এক বাটি মহিষের দুধের দই খাটিয়ার একপাশে রাখিয়া সরিয়া দরজার কবাটের আড়ালে দাড়াইলেন। শিকল নাড়ার শব্দ শুনিয়া বেঙ্কটেশ্বর প্রসাদ উঠিয়া স্ত্রীর নিকটে গেল এবং তখনই হাসিমুখে আসিয়া বলিল-আমার স্ত্রী বলছে আপনি আমাদের বন্ধু হয়েছেন, বন্ধুকে একটু ঠাণ্ড করতে হয় কিনা তাই দইয়ের সঙ্গে বেশী করে পিপুল শুটি ও লঙ্কার গুড়ে মেশানো রয়েছে। আমি হাসিয়া বলিলাম—তা যদি হয় তবে আমার এক কেন সকলের চোখ দিয়ে যাতে জল বের হয় তার জন্তে আমি প্রস্তাব করছি এই দই তিন জনেই খাব। আমুন- কবিপত্নী দরজার আড়াল হইতে হাসিলেন। আমি ছাড়িবার পাত্র নই, দই তাহাকেও খাওয়াইয়া ছাড়িলাম । একটু পরে কবিপত্নী বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেলেন এবং একটা থালা হাতে আবার আসিয়া খাটিয়ার প্রাস্তে থালাটি রাখিলেন ; এবার আমার সামনেই চাপা, কৌতুকমিশ্রিত মুরে আমাকে শুনাইয়া বলিলেন—বাবুজীকে বল এইবার ঘরের তৈরী প্যাড়া খেয়ে গালের জলুনি থামান । কি মুনীর মিষ্টি মেয়েলি ঠেট হিন্দী বুলি ! - বড় ভাল লাগে এ অঞ্চলের মেয়েদের মুখে এই হিন্দীর টানটি। নিজে ভাল হিন্দী বলিতে পারি না বলিয়া আমার কথ্য হিন্দীর প্রতি বেজায় আকর্ষণ। বইয়ের হিন্দী নয়—এই সব পল্লীপ্রান্তে, পাহাড়তলীতে, বনদেশের মধ্যে, বিস্ত্রীর্ণ খামল যব গম ক্ষেতের পাশে, চলনশীল চামড়ার রহট, যেখানে মহিষের দ্বারা ঘূর্ণিত হইয়া ক্ষেতে ক্ষেতে জল লেচন করিতেছে, অন্তহুর্য্যের ছায়াভর অপরাহ্লে দূরের নীলাভ শৈলশ্রেণীর দিকে উড়ন্ত বালিছাস বা সিল্পী বা বকের দল যেখানে একটা দুরবিসৰ্প ভূপৃষ্ঠের আভাস বহন করিয়া আনে—সেখানকার